বদর যুদ্ধের ইতিহাস - বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
ইসলামের ইতিহাসে যতগুলো আলোচিত ঘটনা রয়েছে তাদের মধ্যে সবচাইতে তাৎপর্যপূর্ণ
ঘটনা হচ্ছে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। আমরা সকলেই বদর যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানি।
আজকে আমরা আপনাদের সামনে বদর যুদ্ধের ইতিহাস, বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সহ বদর
যুদ্ধ সম্পর্কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রিয় পাঠক বদর কোন স্থানের নাম নয় বদর মূলত একটি কুপের নাম। বদর নামক গ্রুপের
পাশেই ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলমান এবং কাফেরদের মধ্যে যে ঐতিহাসিক যুদ্ধটি সংঘটিত
হয় তার নামই বদরের যুদ্ধ। চলুন এবার আমরা বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি।
বদর যুদ্ধের ইতিহাস - বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
কোরায়শদের একটি বাণিজ্য কাফেলা মক্কা থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথে অল্পের জন্যে
মুসলমানদের হাত থেকে বেঁচে যায়। এ কাফেলাই সিরিয়া থেকে মক্কা ফেরার পথে নবী(সাঃ)
আরেকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি হযরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ এবং সাঈদ ইবনে যায়দ
(রা.)-কে এ কাফেলা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে উত্তর দিকে রওয়ানা করে দেন। এ দুই
সাহাবী প্রথমে হাওরা নামক জায়গায় পৌঁছে সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। আবু সুফিয়ানের
বাণিজ্য কাফেলা সে স্থান অতিক্রমের সাথে সাথে সাহাবাদ্বয় দ্রুতবেগে মদীনায় ছুটে
গিয়ে এ সম্পর্কে নবী(সাঃ) কে অবহিত করেন।
এ কাফেলায় এক হাজার উটের পিঠে মক্কাবাসীদের কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার দীনার-দুইশ
বাষট্টি কিলোগ্রাম সোনার সমমূল্যের বিভিন্ন ব্যবসায়িক জিনিসপত্র ছিলো। অথচ এ
কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণে ছিলো আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মাত্র ৪০ জন লোক।
আরো পড়ুনঃ কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় । যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কাতিলা গাম । মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার নিয়ম
মদীনাবাসীদের জন্যে এটা ছিলো এক সুবর্ণ সুযোগ। পক্ষান্তরে এসব জিনিস থেকে বঞ্চিত
হওয়া মক্কাবাসীদের জন্যে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি হয়ে
দেখা দেবে। তাই নবী(সাঃ) মদীনার মুসলমানদের মধ্যে ঘোষণা করলেন, কোরায়শদের বাণিজ্য
কাফেলা বহু সম্পদ নিয়ে আসছে। তোমরা এ কাফেলার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ো। হতে পারে,
আল্লাহ তায়ালা সমুদয় সম্পদ তোমাদের গনীমত হিসাবে প্রদান করবেন। তখনো কেউ বুঝতে
পারে নাই কাফেলার পরিবর্তে বদর প্রান্তরে কোরায়শ বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
হবে। এ কারণে বহুসংখ্যক সাহাবী মদীনায়ই থেকে যান।
বদর যুদ্ধ কত হিজরীতে সংঘটিত হয়
বদরের যুদ্ধ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ২য় হিজরী সনের ১৭ই রমজান সংঘটিত হয় ।
বদর যুদ্ধের ইতিহাস
নবী(সাঃ) বদরের উদ্দেশে রওয়ানাকালে তাঁর সঙ্গে তিনশর কিছু বেশী সংখ্যক সাহাবী
ছিলেন। এ সংখ্যা কারো মতে ৩১৩, কারো মতে ৩১৪ । তাদের মধ্যে ৮২, মতান্তরে ৮৩ জন
মোহাজের, বাকি সকলেই ছিলেন আনসার। আনসারদের মধ্যে ৬১ জন আওস আর ৭০ জন খাযরাজ
গোত্রের ।
এদিকে, আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলা খুবই সতর্কতার সাথে পথ চলছিলো। সে চারদিকের
খোঁজ খবর সংগ্রহ করে পরিস্থিতির ওপর নযর রাখছিলো। বদর প্রান্তরের কাছাকাছি পৌছার
পর নিজের কাফেলা ছেড়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে মাজদী ইবনে আমরের সাথে সাক্ষাৎ করে। এবং
তার কাছে মদীনার বাহিনী সম্পর্কে জানতে চায়। মাজদী বললো, অস্বাভাবিক কেউ তো আমার
চোখে পড়েনি, তবে দুজন আরোহীকে দেখেছি। তারা পাহাড়ী টিলার কাছে।
উট বসিয়ে এরপর কুয়া থেকে পানি তুলে চলে গেছে। আবু সুফিয়ান এগিয়ে গিয়ে উটের মল
উঠিয়ে দেখে এবং তা থেকে খেজুরের বীচি বেরিয়ে আসে। এ বীচি পরীক্ষা করে সে। বললো,
আল্লাহর কসম, এ তো ইয়াসরেবের খেজুরের বীচি। একথা বলার পর পরই সে নিজের কাফেলার
কাছে ছুটে যায় এবং পশ্চিমে মোড় নিয়ে সমুদ্র সৈকতের দিকে তাদের গতি পরিবর্তন করে
দেয়। বদর প্রান্তরে যাওয়ার প্রধান সড়ক বাঁ দিকে পড়ে থাকে। এমনি করে আবু সুফিয়ান
তার বাণিজ্য কাফেলা মদীনা বাহিনীর কবলে পড়া থেকে রক্ষা করে। নিরাপদ পথে
মক্কাভিমুখে যাওয়ার সময় আবু সুফিয়ান মক্কা থেকে আগত সৈন্যদের খবর পাঠায়, তোমরা
ফিরে যাও।
বাণিজ্য কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার আর কোনো আশঙ্কা নেই। এ খবর পেয়ে মক্কার সাধারণ
সৈন্যরা ফিরে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলো, কিন্তু আবু জাহল রুখে দাঁড়ায়। সে
নিতান্ত অহংকারের সাথে বললো, খোদার কসম, বদর প্রান্তরে গিয়ে তিন দিন অবস্থান না
করে আমরা ফিরে যাবো না। আবু জেহেলের এ ধরনের হটোকারিতায় ১০০০ সৈন্যের বিশাল
কুরাইশ বাহিনী বদরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
হঠাৎ করে পরিস্থিতির এমন ভয়ানক পরিবর্তনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উচ্চ পর্যায়ের এক ফৌজী মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে
আলোচনা করেন। সেনা অধিনায়ক এবং সাধারণ সৈন্যদের মতামত নেয়া হয়। এ সময় কিছুসংখ্যক
মুসলমান রক্তাক্ত সংঘর্ষের কথা শুনে কেঁপে ওঠেন এবং তাদের মন ধুক ধুক করতে শুরু
করে। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, 'যেমন তোমার প্রতিপালক
তোমাকে ন্যায়ভাবে তোমার গৃহ থেকে বের করেছিলেন, অথচ বিশ্বাসীদের একদল তা পছন্দ
করেনি। সত্য সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তোমার সঙ্গে বিতর্ক করতে থাকে,
মনে হচ্ছিলো যেন তারা মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে।'
(সূরা আনফাল, আয়াত ৫-৬)
সেনা অধিনায়কদের মতামত চাওয়া হলে হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত ওমর (রা.) চমৎকার
মনোভাব প্রকাশ করেন। তাদের কথায় নবী(সাঃ) এর প্রতি নিবেদিত চিত্ততার পরিচয় ফুটে
ওঠে। সাহাবীদের কথা শুনে নবী(সাঃ) খুবই খুশী হন। তিনি বললেন, চলো এবং আনন্দের
সাথে চলো। আল্লাহ তায়ালা আমার সাথে দুটি দলের মধ্যে একটির ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর
শপথ, আমি যেন জাতির বধ্যভূমি দেখতে পাচ্ছি। এরপর যাফরান থেকে সামনে অগ্রসর হন এবং
বদর প্রান্তরের কাছাকাছি এসে অবতরণ করেন।
এ যুদ্ধের প্রথম ইন্ধন ছিলো আসওয়াদ ইবনে আবদুল আছাদ মাখযুমী। এ লোকটি ছিলো
নিতান্ত হঠকারী ও অসচ্চরিত্রের। ময়দানে বেরোবার সময় সে বলছিলো, আমি আল্লাহর সাথে
ওয়াদা করছি, ওদের হাউযের পানি পান করেই ছাড়বো। যদি তা না পারি, তবে সে হাউয ধ্বংস
বা তার জন্যে জীবন দিয়ে দেবো।
আসওয়াদ মোশরেক সেনাদল থেকে বেরিয়ে এলে নবী(সাঃ) এর সাহাবীদের মধ্যে থেকে হযরত
হামযা ইবনে আবদুল মোত্তালেব এগিয়ে গেলেন।
কূপের কাছেই উভয়ের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। হযরত হামযা (রা.) তলোয়ার দিয়ে
এমনভাবে আঘাত করেন যাতে আসওয়াদের পা হাঁটুর নীচে থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে
মাটিতে পড়ে গেলো। তার কর্তিত পা থেকে তার সাথীদের দিকে ফোয়ারার মতো রক্ত বেরোতে
লাগলো। আসওয়াদ হামাগুড়ি দিয়ে কূপের দিকে অগ্রসর হয়ে পানি পান করে তার কসম পূর্ণ
করতে চাচ্ছিলো। এ সময় হযরত হামযা (রা.) আসওয়াদের ওপর পুনরায় আঘাত করেন। এ আঘাতের
ফলে সে জলাশয়ের ভেতর পড়ে মারা যায়।
আসওয়াদ ইবনে আবুল আছাদের হত্যাকান্ড ছিলো বদর যুদ্ধের প্রথম ঘটনা। এ হত্যার পর
সর্বদিকে যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। কোরায়শ বাহিনীর মধ্যে থেকে তিন বিশিষ্ট
যোদ্ধা বেরিয়ে আসে, যারা একই গোত্রের লোক। তারা হলো রবিয়ার দুই পুত্র ওতবা ও
শায়বা এবং ওতবার পুত্র ওলীদ। তারা কাতার থেকে বেরিয়ে এসেই প্রতিপক্ষকে দ্বন্দ্ব
যুদ্ধের আহ্বান জানায়।
তাদের মোকাবেলার জন্যে তিন আনসার যুবক অগ্রসর হন। তারা হলেন, আওফ, মোয়াওয়েয এবং
আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা। প্রথমোক্ত দুজন ছিলেন হারেসের পুত্র। তাদের মায়ের নাম
ছিলো আফরা। কোরায়শরা জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কে? তারা বললো, আমরা মদীনার
আনসার।কোরায়শরা বললো, তোমরা ভদ্র অভিজাত প্রতিপক্ষ, কিন্তু তোমাদের সাথে আমাদের
কোনো প্রয়োজন নেই।
আমরা চাই আমাদের চাচাতো ভাইদের। এরপর তাদের ঘোষক চিৎকার করে বললো, হে মোহাম্মদ,
আমাদের কাছে আমাদের গোত্রের সমকক্ষদের পাঠাও। নবী(সাঃ) বললেন, ওবায়দা ইবনে হারেস,
হামযা এবং আলী এগিয়ে যাও। তারা এগিয়ে যাওয়ার পর তিন কোরায়শ যুবক না চেনার ভান করে
পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা নিজেদের পরিচয় দেন। কোরায়শ যুবকত্রয় বললো, হাঁ, তোমরা
অভিজাত প্রতিপক্ষ। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়।
হযরত ওবায়দা ইবনে হারেস (রা.) ওতবা ইবনে রবিয়ার সাথে, হযরত হামযা (রা.) শায়বার
সাথে এবং হযরত আলী (রা.) ওলীদ ইবনে ওতবার সাথে মোকাবেলা করেন, কিন্তু হযরত ওবায়দা
(রা.) এবং তার প্রতিপক্ষ থেকে একেক আঘাত বিনিময় হয় এবং উভয়ে কঠিন আহত হন। হযরত
হামযা (রা.) এবং হযরত আলী (রা.) নিজ নিজ প্রতিদ্বন্দ্বীর কাজ শেষ করে এসেই ওতবার
ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে শেষ করে ফেলেন। এরপর তারা হযরত ওবায়দাকে উঠিয়ে আনেন।
হযরত ওবায়দা (রা.)-এর পা কেটে কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তার মুখে আর কথা ফুটেনি।
চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে মুসলমানরা মদীনায় ফিরে যাওয়ার পথে সাফরা প্রান্তর অতিক্রম
করার সময় হযরত ওবায়দা (রা.) ইন্তেকাল করেন। হযরত আলী (রা.) কসম খেয়ে বলতেন, এ
আয়াত আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে- 'তারা দু'টি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের
প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে।' (সূরা হজ্জ, আয়াত ১৯)
মোশরেক বাহিনী যখন ময়দানে আবির্ভূত হয় এবং উভয় বাহিনী পরস্পরকে দেখতে থাকে, এ সময়
নবী(সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ তায়ালা, কোরায়শরা পরিপূর্ণ অহংকারের সাথে তোমার
বিরোধিতায় এবং তোমার রসূলকে মিথ্যা প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছে। হে আল্লাহ তায়ালা,
আজ তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্যের বড়ো বেশি প্রয়োজন। হে আল্লাহ তায়ালা, তুমি আজ ওদের
ছিন্ন ভিন্ন করে দাও।
আল্লাহ তায়ালা নবী(সাঃ) এর কাছে এ মর্মে ওহী পাঠালেন, আমি তোমাদের সাহায্য করবো
এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে। (সূরা আনফাল, আয়াত ৯)। এরপর
নবী(সাঃ) এর কাছে হযরত জিবরাঈল (আ.) এলেন। তিনি আবু বকর রাঃ কে বললেন, খুশী হও,
এই যে জিবরাঈল গায়ে ধুলোবালি মাখা অবস্থায় এসেছেন।এরপর নবী(সাঃ) বাইরে আসেন।
আরো পড়ুনঃ ১১ টি ফ্রি টাকা ইনকাম apps ও জনপ্রিয় ফ্রি টাকা ইনকাম সাইট । ফ্রি টাকা ইনকাম নগদে ও বিকাশে পেমেন্ট । স দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম
এ সময় তিনি বর্ম পরিহিত ছিলেন এবং বলছিলেন, 'এ দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ
প্রদর্শন করবে।' (সূরা কামার, আয়াত ৪৫) । এরপর নবী(সাঃ) কোরায়শদের দিকে মুখ করে
বললেন, শাহাতিল উজুহ, অর্থাৎ ওদের চেহারা বিগড়ে যাক। একথা বলেই তিনি তাদের প্রতি
ধুলো নিক্ষেপ করেন। এ নিক্ষিপ্ত ধূলি প্রত্যেক কাফেরের চোখ, মুখ, নাক ও গলায়
প্রবেশ করে। তাদের একজনও বাদ থাকেনি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তখন
তুমি নিক্ষেপ করোনি, বরং আল্লাহ তায়ালাই নিক্ষেপ করেছিলেন। (সূরা আনফাল, আয়াত ১৭)
।
এরপর নবী(সাঃ) জবাবী হামলার নির্দেশ এবং যুদ্ধের তাকিদ দিয়ে বলেন, তোমরা এগিয়ে
যাও। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মোহাম্মদের প্রাণ, তাদের সঙ্গে তোমাদের যে কেউ
দৃঢ়তার সাথে পুণ্যের কাজ মনে করে অগ্রগামী হয়ে পেছনে সরে না এসে যুদ্ধ করবে এবং
মারা যাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই জান্নাত দান করবেন। সেই জান্নাতের প্রতি
ওঠো যার দিগন্ত ও বিস্তৃতি আকাশ এবং পৃথিবীর সমপরিমাণ। নবী(সাঃ) এর কথায়
উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলমানেরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কাফেরদের উপর আক্রমণ শুরু করে।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী টু খুলনা ট্রেন এর সময় ও ভাড়া । ঢাকা টু রাজশাহী ট্রেনের সময়সূচী । রেলওয়ে টিকেট অনলাইনে কাটার নিয়ম
কিছুক্ষণের মধ্যেই মোশরেক বাহিনীতে ব্যর্থতা ও হতাশাজনিত চাঞ্চল্যের লক্ষণ ফুটে
ওঠে।প্রবল আক্রমণের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তে থাকে। যুদ্ধের পরিণাম প্রকাশ
পাওয়ার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে। অতপর মোশরেক বাহিনী বিশৃংখলভাবে পালাতে থাকে। তাদের
মাঝে ভীতি ছেয়ে পড়ে। মুসলমানরা তাদের কাউকে হত্যা, কাউকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসছিলেন।
আর তাদের পেছনে ধাওয়া করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা পুরোপুরি সুস্পষ্ট পরাজয় বরণ
করে।
বদর যুদ্ধের ফলাফল
মহান আল্লাহর সহযোগিতায় মুসলমানেরা বদরের ময়দানে একটি বড় বিজয় অর্জন করেন।
মুসলমানদের পক্ষ থেকে মোট ১৪ জন সাহাবীর শহীদ হন। যুদ্ধে মোশরেকদের প্রভূত ক্ষতি
হয়েছিলো। তাদের নেতা আবু জেহেল সহ ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়। নিহতরা ছিলো
মোশরেকদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এবং গোত্রের সর্দার।
হযরত আবু তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) নির্দেশে বদরের দিন কোরায়শদের ২৪ জন
বড়ো বড়ো সর্দারের লাশ বদরের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়। তিনি কূপের তীরে এসে
থেমে কূপে নিক্ষিপ্তদের তাদের বাপের নাম নিয়ে ডেকে ডেকে বলতে লাগলেন, হে অমুকের
পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল সাঃ এর
আনুগত্য করতে, তবে সেটা কি তোমাদের জন্যে ভালো হতো না? আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে
যে ওয়াদা করেছেন আমরা তার সত্যতা পেয়েছি, তোমরা কি তোমাদের প্রতিপালকের কৃত
ওয়াদার সত্যতা পেয়েছো?
আরো পড়ুনঃ নতুন ওয়ালটন ফ্রীজ প্রাইজ । উকিল/অ্যাডভোকেট/ব্যারিস্টার হতে কি করবেন ? । ১০০+ শিক্ষামূলক উক্তি
হযরত ওমর (রা.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি এমনসব দেহের সাথে কি কথা বলছেন,
যাদের রূহই নেই। তিনি বললেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মোহাম্মদের প্রাণ, আমি যা
কিছু বলছি, তা তোমরা ওদের চেয়ে বেশি শুনতে পাও না। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তোমরা
ওদের চেয়ে বেশি শ্রবণকারী নও, কিন্তু ওরা জবাব দিতে পারে না।
বদর যুদ্ধে কতজন সাহাবী শহীদ হন
বদরের যুদ্ধে মোট ১৪ জন সাহাবী শহীদ হন যাদের মধ্যে ৬ জন মুহাজের এবং ০৮ জন
আনসার।
বদর যুদ্ধে প্রথম শহীদ কে
হযরত মাহজা ইবনে সালেহ (রাঃ) কে বদরের যুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বদর যুদ্ধের ইতিহাস - বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল : লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে বদর যুদ্ধের ইতিহাস, বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সহ বদর যুদ্ধ সম্পর্কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।