ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
প্রিয় পাঠক বর্তমান বিশ্বে যে সকল মরণব্যাধি রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম
ক্যান্সার। আজকে আমরা আপনাদের সামনে ক্যান্সার লক্ষণ , ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর
লক্ষণ সহ ক্যান্সার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের
আজকের আলোচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আশা করি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে
পড়বেন।
আমাদের আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ক্যান্সার লক্ষণ , ক্যান্সার রোগীর
মৃত্যুর লক্ষণ , জরায়ু ক্যান্সার লক্ষণ , জরায়ু ক্যান্সার টিকা ক্যান্সার হলে
কতদিন বাঁচে , কোলন ক্যান্সার লক্ষণ, ব্রেস্ট ক্যান্সার লক্ষণ, ক্যান্সার
আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ, ব্লাড ক্যান্সার লক্ষণ , ফুসফুস ক্যান্সার লক্ষণ
ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দেখা যায় যেমন স্তন ক্যান্সার, জরায়ু
ক্যান্সার , ফুসফুস ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, প্রোস্টেট
ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি। চলুন প্রিয় পাঠক আমরা প্রথমেই জেনে নেই
প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার লক্ষণ সমূহ কি কি।
ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ
প্রাথমিকভাবে নিম্নের লক্ষণ গুলো থাকলে ধারণা করা যেতে পারে ক্যান্সারে আক্রান্ত
হওয়ারঃ
- মানসিক অস্বস্তি
- অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
- ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
- অস্বাভাবিকভাবে ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
- দীর্ঘদিনের ব্যথা
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে গোটা উঠা
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা
- ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া
- দীর্ঘদিন জ্বরে ভোগা
- রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
- খাবার গ্রহণে সমস্যা
- খুব ক্লান্ত বোধ করা
- ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া
জরায়ু ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণসমূহের মধ্যে সর্বাধিক পরিলক্ষিত লক্ষণসমূহ হলোঃ
- অস্বাভাবিক যোনি রক্তপাত
- অস্বাভাবিক যোনি স্রাব
- যোণী ব্যথা
- সহবাসের সময় ব্যথা
- অতিরিক্ত ওজন হ্রাস
- অবসাদ
জরায়ু ক্যান্সার টিকা
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব টিকা প্রথম বাজারে আসে ২০০৬ সালের দিকে।
এইচপিভি ভাইরাসের মাধ্যমে জরায়ুমুখে ক্যানসার হয় আর এই ভাইরাসের বিরুদ্ধেই এই
টিকা আবিষ্কার হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ ধরনের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন-
- নোনাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন
- বাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন
- কোয়াড্রিভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন
কোলন ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ
- কোলন ক্যান্সারের রোগীদের মল ত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে।
- মলত্যাগের পরেও কখনো কখনো মল রয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেখা যায়।
- সরু ফিতার মতো মল নির্গত হওয়াকেও কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- পেট ব্যথা ,পেট ফাঁপা কোলন ক্যান্সারের অন্যতম মুখ্য একটি উপসর্গ।
- হঠাৎ করে মল ত্যাগের প্রয়োজনের ব্যাপক তারতম্য অনুভূত হলে সেটা কোলন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ। যেমন রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মলত্যাগ করে এবং মল অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে।
- হঠাৎ বমি বমি ভাব হওয়া,ওজন অনেক কমে যাওয়া ও গা গুলিয়ে ওঠা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ব্লাড ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ
লিউকেমিয়ার বা ব্লাড ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- জ্বরের সাথে ঠান্ডা লাগা
- রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- হাড়ে ব্যথা বা কোমলতা
- গুরুতর এবং ঘন ঘন সংক্রমণ
- ত্বকে ছোট ছোট লাল দাগ
- সহজেই রক্তপাত বা ঘা হওয়ার প্রবণতা
- অপ্রত্যাশিত ওজন কমা
ফুসফুস ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ হলঃ
- প্রচন্ড কাশি
- কাশিতে কফ বা রক্ত
- গভীর শ্বাস
- হাসি বা কাশি চলাকালীন বুকে তীব্র ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- ঘা
- দুর্বলতা এবং ক্লান্তি
- ক্ষুধামান্দা
- খুব ওজন হ্রাস
ব্রেস্ট ক্যান্সার লক্ষণ
- সাধারণত হাড়, লিভার, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কের হাড়ের মেটাস্টেসগুলি ফুলে যাওয়া, প্রগতিশীল হাড়ের ব্যথা
- পেটে ব্যথা,
- বমি বমি ভাব,
- ত্বকের সমস্যা হতে পারে - ফুসকুড়ি , চুলকানি ত্বক, বা ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া ।
- বুকে ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- নিয়মিত কাশি অনুভব করেন
- আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা, দৃষ্টিশক্তি, স্মৃতিশক্তি এবং নিয়মিত আচরণে ব্যাঘাত ঘটা।
ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি
ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
যেমনঃ
- অস্ত্রোপচার
- রেডিওথেরাপি
- কেমোথেরাপি
- হরমোন থেরাপি
- সহায়ক চিকিৎসা
- অন্যান্য চিকিৎসা
নিচে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
রেডিওথেরাপি
নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার
কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
কেমোথেরাপি
এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক)
ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টিরও বেশি ধরনের কেমিওথেরাপি ওষুধ রয়েছে।
এগুলোর ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই
এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনভাবে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেয়া হয়।
অস্ত্রোপচার
যে জায়গাটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয় সেটির ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার
আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়।
হরমোন থেরাপি
শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা হয়। শরীরের
বৃদ্ধির সাথে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কোন কোন ক্যান্সার এই হরমোনের মাধ্যমে
প্রভাবিত হয়। এই হরমোন বিভিন্ন ঔষধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন থেরাপি
প্রদান করা হয়।
সহায়ক চিকিৎসা
ক্যান্সারের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে এখন জোর
দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের
মধ্যে দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এই কারণে অনেক সময়ে তাদের
অবস্থা বেশি গুরুতর না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান।
অন্যান্য চিকিৎসা
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এ ধরনের ওষুধ তৈরির
ব্যাপারে এখন গবেষণা চলছে। এছাড়াও ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা
চলছে। কিন্তু এখনো এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে
ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর কারো কাছেই নেই। এটি মূলত
নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংক্রমনের মাত্রা এবং চিকিৎসা ধরনের উপর।
এছাড়াও উন্নত দেশসমূহে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ
দেন চিকিৎসকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজও
করে যাচ্ছে।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি গ্রুপ গঠন করা, যেখানে তারা
নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারেন। এর পাশাপাশি যোগ, মেডিটেশন
ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেয়া হয়। এর
পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোন কাজে নিয়োজিত হতে
চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়।
এতে করে রোগীদের ক্যান্সার মোকাবেলায় সাহস এবং মনোবল দুটিই বৃদ্ধি
পায় এবং অনেকেই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন। এর বিপরীতে অনেকেই
, ক্যান্সার আক্রান্ত শোনা মাত্রই মানসিক দুশ্চিন্তা এবং হতাশায় এতটাই
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন যে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পরে মৃত্যুবরণ
করে। তাই ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই
জটিল।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগের নির্দিষ্ট কোন মৃত্যু লক্ষণ নেই। তবে মারা যাওয়ার আগে
সাধারণত নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো অনেকের মাঝে প্রকাশিত হয়ঃ
- শারীরিক শক্তি একেবারে হ্রাস পাওয়া
- মাত্রা অতিরিক্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বর অনুভূত হওয়া
- রাতে অত্যাধিক ঘাম নির্গত হওয়া
- কথা বলার সশয় মুখ-জিহ্বার প্রতিক্রিয়া কমে যাওয়া।
- দৃষ্টিশক্তি কমে আসা।
- চোখের পাতা বন্ধ করতে না পারা ।
- মাথা সামনের দিকে নুয়ে আসে।
- আক্রান্ত রোগের শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া
- অতিরিক্ত বমি বমি ভাব
- সমগ্র শরীরে অত্যাধিক ব্যথা
- ঘন ঘন জ্ঞান হারানো
সূত্রসমূহঃ
ক্যান্সার লক্ষণ । ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ক্যান্সার লক্ষণ , ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর
লক্ষণ , জরায়ু ক্যান্সার লক্ষণ , জরায়ু ক্যান্সার টিকা ক্যান্সার হলে কতদিন
বাঁচে , কোলন ক্যান্সার লক্ষণ, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ, ব্লাড
ক্যান্সার লক্ষণ , ফুসফুস ক্যান্সার লক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।