নামাজের ফরজ কয়টি । নামাজের ওয়াজিব কয়টি । নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি
প্রিয় পাঠক আমরা সকলে নিয়মিত নামাজ পড়ে থাকি কিন্তু আপনি কি জানেন নামাজের ফরজ
কয়টি ? নামাজের ওয়াজিব কয়টি? নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি কি কি? যদি না জেনে থাকেন
তাহলে আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে
যাবেন।
আজকে আমরা আপনাদের সামনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তালিকা , নামাজের ফরজ কয়টি ,
নামাজের ওয়াজিব কয়টি , নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি , নামাজের সুন্নত সমূহ , নামাজের
মোস্তাহাব সমূহ , নামাজের মাকরুহ সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নামাজের ফরজ কয়টি । নামাজের ওয়াজিব কয়টি । নামাজ ভঙ্গের কারণ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তালিকা
মহান আল্লাহর
গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে নামাজ। প্রিয় পাঠক আমরা সকলে পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজের তালিকা জানি । এগুলো হলোঃ
নামাজের ফরজ কয়টি
নামাজের মোট ফরজ ১৩ টি। এর মধ্যে
নামাজের আহকাম
০৬ টি এবং নামাজের আরকান ০৭ টি। নামাজের আহকাম বলতে মূলত নামাজের বাইরের ফরজ সমূহ
কে বুঝানো হয়। এবং নামাজের আরকান বলতে নামাজের ভিতরের ফরজ সমূহকে বুঝানো হয় ।
নামাজের ফরজ কয়টি : নামাজের আহকাম বা শর্তাবলী
নামাজের শর্ত ছয়টি-
- শরীর পাক থাকা,
- পরিধানের কাপড়-চোপড় পাক থাকা,
- নামাজের জায়গা পাক থাকা,
- কেবলামুখি হয়ে নামাজ পড়া,
- শরীর বস্ত্রাবৃত করা,
- ওয়াক্ত মতো নামাজ পড়া।
আরো পড়ুনঃ ১০০+ শিক্ষামূলক উক্তি । ত দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম । জ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
নামাজের ফরজ কয়টি : নামাজের আরকান বা ফরজ সমূহ
নামাজের আরকান সাতটি-
- তাকবীর বলে তাহরীমা বাঁধা,
- কেয়াম অর্থাৎ সোজা হয়ে দাঁড়ানো,
- কেরাত পাঠ করা,
- রুকু করা,
- সিজদা করা,
- বৈঠক করা,
- সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা ।
ওপরে বর্ণিত নামাজের ফরজ ১৩ টির যেকোনো একটিও যদি ছুটে
যায় তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে এবং নামাজ পুনরায় আদায় করতে
হবে।
নামাজের ওয়াজিব কয়টি
নামাজের মোট ওয়াজিব ১৪ টি। এগুলো হলোঃ
- ফরজ নামাজ সমূহের প্রথম দুই রাকাতকে কেরাতের জন্য নির্ধারণ করা,
- ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত ছাড়া সমস্ত নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া,
- ফরজ নামাজ সমূহের প্রথম দুই রাকআত এবং ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামাজ সমূহের রাকাতে সূরা ফাতিহার পর কোনো সূরা কিংবা বড় এক আয়াত অথবা ছোট তিন আয়াত পড়া,
- সূরা ফাতিহা অন্য সূরার পূর্বে পড়া,
- ফজর, মাগরিব, এশা, জুমা, তারাবীহ ও দুই ঈদের নামাজের প্রথম দুই রাকাতে কেরাত শব্দ করে পড়া.
- নামাজের প্রত্যেক রোকন তরতীবের সাথে আদায় করা,
- রুকু ও সিজদার মাঝে এক তাসবীহ আন্দাজ সময় দেরি করা,
- ফরজ, ওয়াজিব, নফল, সুন্নত যে কোনো নামাজে দুই রাকাত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠক করা। এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়া,
- তিন কিংবা চার রাকাতের নামাজ পড়তে হলে প্রথম বৈঠকের পর বাকি দুই কিংবা এক রাকাত নামাজ পড়ে আত্তাহিয়্যাতু পড়া,
- দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা,
- ইমাম এর মাগরিব, এশা, জুমা, তারাবীহ, বিতর ও দুই ঈদের নামাজে কেরাত শব্দ করে পড়া,
- জোহর ও আসরের নামাজের কেরাত চুপে চুপে পড়া,
- বিতর নামাজের দোয়ায়ে কুনূত পড়বার আগে তাকবীর বলে দু' হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাহরীমা বাঁধা,
- দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়বার তাকবীর বলা ।
নামাজের মধ্যে ওপরে বর্ণিত ওয়াজিব সমূহ বাদ পড়লে সিজদায়ে সাহু করতে হবে, অন্যথা নামাজ
পুনরায় পড়তে হবে ।
আরো পড়ুন: উকিল/অ্যাডভোকেট/ব্যারিস্টার হতে কি করবেন ? । হ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম । বাংলাদেশের ৬৬ তম জেলার নাম কি ?
নামাজের সুন্নত সমূহ
নামাজের সুন্নত মোট ২১ টি। এগুলো হলঃ
- আযান দেওয়া,
- জামাতের সাথে নামাজ পড়া,
- কাতার সোজা রাখা,
- পুরুষ তাকবীর বলে দু' হাত কান পর্যন্ত উঠানো ও স্ত্রীলোক দু' হাত কাঁধ বরাবর উঠানো,
- ইমামের শব্দ করে তাকবীর বলা, মুক্তাদী ও স্ত্রীলোকদের মনে মনে বলা।
- তাহরীমা বাঁধা (পুরুষের নাভির ওপর ও স্ত্রীলোকের বুকের ওপর),
- মনে মনে সানা পড়া (সুবাহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারকা কাসমুকা ওতাওয়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা ),
- মনে মনে তা‘আউয পড়া (আ'উযুবিল্লাহিমিনাশ শায়তানির রজীম.),
- তাসমিয়া পড়া (বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম),
- সূরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে আমীন বলা,
- তাকবীর বলে রুকু দেওয়া (ইমাম হলে শব্দ করে) মুক্তাদী ও স্ত্রীলাকের মনে মনে বলা,
- রুকুতে তিনবার তাসবীহ পড়া (সুবাহানা রাব্বিয়াল আযীম),
- রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো,
- সিজদায় যাওয়ার এবং সিজদা থেকে উঠার তাকবীর বলা,
- সিজদাতে তিনবার তাসবীহ পড়া (সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা),
- দুই সিজদার মাঝে এক তাসবীহ পাঠের সময় পরিমাণ বসা,
- ইমাম রুকু হতে সোজা হবার সময় তাসমিয়া (সামি 'আল্লাহু লিমান হামিদাহ) বললে সে সময় মুক্তাদীর সোজা হয়ে তাহমীদ বলা (রাব্বানা লাকাল হামদ), একাকী নামাজ পড়লে তাসমিয়া ও তাহমীদ দুই-ই বলতে হয়,
- বৈঠকে পুরুষের নিয়ম বাম পা বিছিয়ে ডান পায়ের অঙ্গুলির ওপর ভর করে বাম উরুর ওপর বসা ও স্ত্রীলোকের জন্য ডানদিকে দুই পা বের করে বাম জানুর ওপর বসা। তারপর দু' হাতের অঙ্গুলি কা'বামুখি করে হাঁটুর ওপর রাখা,
- ফরজ নামাজ দুই রাকাতের বেশি হলে পরবর্তী রাকআতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া,
- দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করা,
- দরুদ পাঠ করা ও সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা ।
নামাজের সুন্নতগুলো ছুটে গেলে নামাজ হয়ে যায়, কিন্তু গুনাহগার হতে হয়।
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোবাইল নাম্বার । রাজশাহী টু খুলনা ট্রেনের সময়সূচী । রেডমি মোবাইল প্রাইস - 2024
নামাজের মোস্তাহাব সমূহ
নিচে নামাজের মোস্তাহাব সমূহ লেখা হলোঃ
- নামাজে দাঁড়িয়ে সূরা পাঠকালীন সিজদার স্থানে নজর রাখা,
- রুকুতে গিয়ে পায়ের পাতার দিকে নজর রাখা,
- সিজদাতে গিয়ে নাকের দিকে দৃষ্টি রাখা,
- আত্তাহিয়্যাতু পাঠকালে কোলের ওপর দৃষ্টি রাখা,
- সালাম ফিরানোর সময় দুই কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখা,
- নামাজ পড়ার সময় হাই উঠলে (হাঁচি কিংবা হাই উঠলে) সাধ্যমতো বন্ধ করা,
- নামাজে দাঁড়াবার সময় দু' পায়ের মাঝে চার আঙুল পরিমাণ জায়গা ফাঁক রাখা,
- নামাজের প্রথম রাকাতে বড় সূরা ও দ্বিতীয় রাকাতে ছোট সূরা পড়া,
- নামাজের নিয়ত মুখে বলা ।
নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি
নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি । এগুলো না জানার কারণে আমাদের নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। এ
ধরনের প্রয়োজনীয় কারণগুলো সকলেরই জেনে রাখা আবশ্যক, নতুবা নামাজ আদায় হবে না।
নিম্নে নামাজ ভঙ্গের কারণ বর্ণনা করা হলোঃ-
- নামাজরত অবস্থায় কথা বললে,
- নামাজে থাকাকালীন সময়ে স্বেচ্ছায় কিংবা ভুলে পানাহার করলে,
- নামাজরত অবস্থায় কাউকে সালাম দিলে কিংবা কারো সালামের উত্তর প্রদান করলে,
- অনর্থকভাবে নামাজের মধ্যে উহ্ আহ্ শব্দ করলে,
- নিষ্প্রয়োজনে কান্নাকাটি করা, তবে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে যদি নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলে তবে নামাজ ভঙ্গ হবে না।
- নামাজের মধ্যে উচ্চৈঃস্বরে হাসলে,
- নামাজের মধ্যে পার্থিব কোনো কিছু প্রার্থনা করলে,
- নামাজের কোনো ফরজ কাজ পরিত্যাগ করলে,
- সতরের এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত খুলে গেলে,
- নামাজের মধ্যে কোনো লেখা দেখে পাঠ করলে, চাই তা কুরআন মাজীদ হোক অথবা অন্য কোনো লেখা হোক,
- কেবলার দিক হতে অন্য দিকে ফিরে গেলে,
- কারো সুসংবাদ শুনে ‘সুবহান্নাল্লাহ্' বা ‘আলহাম্দুল্লিাহ্' বললে কিংবা কারো দুঃসংবাদ শুনে ‘ইন্নালিল্লাহ্' বললে,
- বিনা অজুতে নামাজ পড়লে,
- কোনো হাঁচিদাতার 'আলহামদুলিল্লাহ'র উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ' বললে,
- ইমামের মুক্তাদী ব্যতীত অন্য লোকের লোকমা গ্রহণ করলে,
- ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের মধ্যে কুরআন মাজীদ ভুল পড়লে,
- নাপাক জায়গায় সিজদা করলে,
- নামাজের মধ্যে নিদ্রায় ঢলে পড়লে,
- নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজ পড়লে,
যদি কারো নামাজ নষ্ট হয়ে যায়, তবে পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে।
নামাজের মাকরুহ সমূহ
এমন কিছু কাজ আছে যা ঘটলে নামাজ ভঙ্গ হয় না বটে কিন্তু নামাজের সৌন্দর্য
অনেকাংশে হ্রাস পায়। মকরুহ হলে নামাজ পুনরায় আদায় করার আবশ্যকতা নেই, তবে
নামাজকে সর্বাঙ্গে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলতে হলে মকরুহ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকা
একান্ত প্রয়োজন । নিম্নে নামাজের মকরুহ সমূহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
- নামাজের মধ্যে মুখ আবৃত করে রাখা,
- নামাজের মধ্যে চোখ বন্ধ করে রাখা,
- নামাজের মধ্যে আঙুল ফুটানো,
- বিনা কারণে খালি মাথায় নামাজ আদায় করা,
- কাপড় বা শরীর নিয়ে খেলা করা,
- ঘাড় ফিরিয়ে ডানে বামে তাকানো,
- শরীরে আড়মোড়া দেওয়া,
- নামাজ অবস্থায় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা,
- প্রাণীর ছবি সম্বলিত কাপড় পরিধান করা,
- কোমরে হাত রাখা,
- প্রকাশ্যভাবে হাতের আঙুলের সাহায্যে তাসবীহ্ বা আয়াত গণনা করা,
- হাই আসলে তা বন্ধ করার চেষ্টা না করা, তবে চেষ্টা করে বন্ধ না করতে পারলে ডান হাতের পিঠ মুখের ওপরে রাখবে,
- একেবারে লাল পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করা,
- নামাজের জন্য কোনো বিশেষ সূরা নির্দিষ্ট করে নেওয়া,
- ফরজ নামাজে একই সূরা দু'বার পাঠ করা,
- জামাতের মধ্যে মুক্তাদীর কষ্ট হয় ইমামের এ রকম দীর্ঘ কেরাত পড়া,
- ফরজ নামাজে বিনা ওজরে লাঠি বা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো,
- কপালের মাটি বা ঘাম মোছা,
- কোনো বস্তুর ঘ্রাণ নেওয়া,
- থুথু, কফ ইত্যাদি ফেলা,
- নাক ঝাড়া,
- ঠেলাঠেলি, করে কাতারের মধ্যে প্রবেশ করা,
- প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ পড়া,
- এক সূরার কিছু অংশ পাঠ করে অন্য সূরা পড়া,
- কেরাত পড়া শেষ হতে না রুকু হতেই রুকুতে যাওয়া,
- অতি তাড়াতাড়ি রুকু সিজদা করা।
নামাজের ফরজ কয়টি । নামাজের ওয়াজিব কয়টি । নামাজ ভঙ্গের কারণ : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আমরা আপনাদের সামনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তালিকা , নামাজের ফরজ কয়টি
, নামাজের ওয়াজিব কয়টি , নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি , নামাজের সুন্নত সমূহ ,
নামাজের মোস্তাহাব সমূহ , নামাজের মাকরুহ সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা
হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন।।ধন্যবাদ।।