জানাজার নামাজের নিয়ম । জানাজার নামাজের দোয়া
প্রিয় পাঠক একজন মুসলমানের জন্য জানাজার নামাজের নিয়ম এবং জানাজার নামাজের
দোয়া জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের আত্মীয়-স্বজন
পাড়া-প্রতিবেশী সহ অনেক মুসলিম ইন্তেকাল করেন। মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায়
করা ফরজে কেফায়া।
তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি জানাজার নামাজের নিয়ত আরবিতে ,
জানাজার নামাজের নিয়ম , জানাজার নামাজের দোয়া , জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা
অর্থসহ এবং জানাজার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা নিয়ে। আশা করব আমাদের
পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
জানাজার নামাজের নিয়ম । জানাজার নামাজের দোয়া
মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পূর্বে মৃতকে সামনে রেখে ০৪ তাকবীরের যে নামাজ পড়া
হয় তাকে জানাজার নামাজ বলে। জানাজার নামাজ 'ফরজে কিফায়া'।জানাজার নামাজের নিয়ম
অনুযায়ী মহল্লার কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। আর
যদি কেউ না পড়ে তাহলে সকলেই গুনাহগার হবে ।
পাড়া-প্রতিবেশী
সকল মুসলমানের এই নামাজ পড়া কর্তব্য।
জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজ জামাতে পড়তে হয়, রুকু বা সিজদা করতে হয় না। জানাযায় লোক যত
বেশি হয় ততই ভালো। কেননা বেশি লোকের দোয়ায় মৃতের আত্মা বেশি শান্তি পায়। আর
যারা এই নামাজে যোগদান করে তাদের প্রতিও আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন ।
জানাজার নামাজের নিয়ত আরবিতে
নাইয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা'আ তাকবীরাতি সালাতিল জানাযাতি
ফারদ্বিল কিফায়াতি আচ্ছানাউ লিল্লাহি তা'আলা ওয়াস্সালাতু ‘আলান নাবিয়্যি
ওয়াদ্দু'আও লিহাযাল মাইয়্যিতি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি
আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে কা'বা শরীফের দিকে মুখ করে চার তাকবীরের সাথে ফরজে
কিফায়া জানাজার নামাজ পড়তে মনস্থ করলাম। সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ্র উপযুক্ত এবং
আমাদের নবীর ওপর শান্তি ও এই মৃতব্যক্তির ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক, আল্লাহু আকবার
।
মৃতব্যক্তি স্ত্রীলোক হলে 'লিহাযাল মাইয়্যিতে'-এর স্থলে 'লিহাযিহিল মাইয়্যিতি'
বলতে হবে।
তৎপর তাকবীর বলে তাহরীমা বাঁধবে কিন্তু অন্য তিন তাকবীরে তাহরীমা বাঁধতে হবে না।
ইমাম এবং মুক্তাদীগণ নিম্নবর্ণিত সানা পড়ে দ্বিতীয় তাকবীর বলবে।
জানাজার নামাজের নিয়ম : সানা
সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা
ওয়া জাল্লা সানাউকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা দ্বারা শুরু
করছি, আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সমুন্নত, আপনার প্রশংসা মহান । আপনি
ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই ।
দ্বিতীয় তাকবীর বলে নিম্নোক্ত দরুদ শরীফ পাঠ করে তৃতীয় তাকবীর বলবে।
জানাজার নামাজের নিয়ম : দরুদ
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া 'আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা
আলা ইব্রাহীমা ওয়া 'আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক
আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া 'আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া 'আলা
আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আরো পড়ুন: উকিল / অ্যাডভোকেট / ব্যারিস্টার হওয়ার পদ্ধতি । হ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোবাইল নাম্বার
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সা.) ও মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার পরিবজনের
প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আ.) ও ইবরাহীম (আ.)-এর পরিবার-পরিজনের
প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসতি ও সম্মানিত ।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সা.) ও
মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি বরকত নাজেল করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আ.) ও ইবরাহীম
(আ.)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি বরকত নাজেল করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও
সম্মানিত ।
তৃতীয় তাকবীর শেষ করে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করে চতুর্থ তাকবীর বলবে।
জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থসহ
আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা
ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছা-না ; আল্লাহুম্মা মান
আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহইহী 'আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফাইতাহু মিন্না
ফাতওয়াফ্ফাহু 'আলাল ঈমান বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
অর্থ : হে আল্লাহ্! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধ,
পুরুষ ও স্ত্রীলোক সকলকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ্! আমাদের মধ্যে যাদের জীবিত রাখো
তাদেরকে ইসলামের মধ্যে রাখিও এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করো তাদেরকে ঈমানের সাথে
নিও। তোমার দয়ায় হে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময় ।
লাশ যদি নাবালেগ
ছেলে হয় তাহলে উক্ত দোয়ার পরিবর্তে নিম্নোক্ত জানাজার নামাজের দোয়া পাঠ করবে।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ'আলহু লানা ফারত্বাওঁ ওয়াজআলহু লানা আজরাও ওয়া যুখরাও
ওয়াজ আল্হু লানা শাফি‘আওঁ ওয়া মুশাফি আন ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তাকে আমাদের অগ্রিম সওগাতরূপে গ্রহণ করুন, তাকে আমাদের জন্য
উত্তম প্রতিদানে পরিণত করুন, আমাদের পরকালের সম্বল করুন, তাকে আমাদের জন্য
সুপারিশকারী করুন এবং এমন করুন যার সুপারিশ গৃহীত হয় ।
লাশ যদি নাবালেগা
মেয়ে হয়, তবে নিম্নের জানাজার নামাজের দোয়া পাঠ করবে।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারত্বাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাওঁ
ওয়াজআলহা লানা শাফি' আতাওঁ ওয়া মুশাফি‘আতান ।
উক্ত দোয়া পাঠান্তে চতুর্থ তাকবীর বলে ডানে বামে সালাম ফিরাবে।
জানাজার নামাজের ফরজ
জানাজার নামাজে ফরজ ২টি। যথা:-
- চারবার আল্লাহু আকবার বলা । জানাজার নামাজের চার তাকবীর অন্য নামাজের চার রাকআতের মতো
- কিয়াম অর্থাৎ দঁড়িয়ে জানাজার নামাজ পড়া, যেমন- অন্যান্য ফরজ ও ওয়াজিব নামাজে দাঁড়ানো ফরজ। সুতরাং কোনো ওজর ব্যতিরেকে এটা তরক করা জায়েজ হবে না ।
জানাজার নামাজের সুন্নত
জানাজার নামাজে সুন্নত তিনটি । যথা:-
- ১ম তাকবীরের পর ছানা পড়া,
- ২য় তাকবীরের পর দরুদ শরীফ পড়া,
- ৩য় তাকবীরের পর মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করা ৷
জানাজার নামাজের নিয়ম : গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা
- জানাজার নামাজের কোন আজান নেই।
- মৃতদেহ সুবিধাজনক স্থানে খাটের ওপর উত্তর দিকে মাথা রেখে কেবলামুখি করে জানাজার নামাজ আদায় করবেন।
- বাদশাহ, কাজি অথবা গ্রামের ইমাম মৃতব্যক্তির ইমামতি করবেন।
- এ সমস্ত লোকের অভাবে মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধি ইমামতি করবেন।
- পিতা যদি মৃতব্যক্তি হয়, তাহলে উপযুক্ত ছেলে থাকলে সে ইমামতি করবে, অথবা প্রতিনিধি যাকে হুকুম করবেন। প্রতিনিধির বিনা এজাজতে ইমামতি করা উচিত নয় ।
- জানাজার নামাজে ইমাম ব্যতীত মুক্তাদীগণ তিন কাতারে দাঁড়াবে ।
- বেশি লোক হলে বেজোড় কাতারে দাঁড়াবে।
- ইমামের সঙ্গে মুক্তাদীগণ নিয়ত করে তাকবীর বলে তাহরীমা বাঁধবে। বাকি তিন তাকবীরে কারো হাত তুলতে হবে না ।
- মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার জানাযা পড়তে হয় না ।
- যারা জুতা পরিহিত অবস্থায় জানাজার নামাজ পড়েন; তাদের এটা লক্ষ্য রাখা আবশ্যক যে, যে স্থানে তারা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে সে স্থানটি ও পায়ের জুতা উভয়টি পাক হতে হবে।
- আর যদি পা থেকে জুতা খুলে জুতার ওপর দাঁড়ায়, তবে শুধু জুতা পাক হওয়াই আবশ্যক । অনেকে এর প্রতি লক্ষ্য রাখে না, ফলে জুতা নাপাক থাকার কারণে তাদের নামাজ শুদ্ধ হয় না।
- মৃতব্যক্তি মুসলমান হওয়া আবশ্যক।
- কাফির ও মুরতাদের জানাজার নামাজ পড়া জায়েজ নয়।
- মুসলমান যদি ফাসিক বা বিদ'আতী হয়, তবু তার জানাজার নামাজ পড়া জায়েজ ।
- যে নাবালেগ ছেলের পিতা বা মাতা মুসলমান সে ছেলেও মুসলমান গন্য হবে এবং সে মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়া হবে ।
- মৃত ব্যক্তি বলতে এমন লোক বুঝানো হয়েছে, যে জীবিত জন্ম গ্রহণ করার পর মারা গেছে। আর যদি সন্তান মৃত অবস্থায় জন্মে, তবে তার জানাজার নামাজ পড়া যাবে না ।
- মৃতব্যক্তির শরীর ও কাফন প্রকৃত নাপাকি ও বিধানগত নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়া। অবশ্য কাফন পরানোর পর যদি মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে কোনো প্রকৃত নাপাকি বের হয় এবং এ কারণে মৃত ব্যক্তির শরীর একেবারে নাপাক হয়ে যায়, তবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
- জানাজার নামাজে রুকু, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদি নেই।
- জানাজার নামাজে জামাত শর্ত নয়। অতঃএব যদি মাত্র একজন লোক জানাজার নামাজ পড়ে, তবু জানাজার নামাজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। চাই সে পুরুষ হোক বা মহিলা, বালেগ হোক বা নাবালেগ ।
জানাজার নামাজের নিয়ম । জানাজার নামাজের দোয়া : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে
আমরা আপনাদের সামনে জানাজার নামাজের নিয়ত আরবিতে , জানাজার নামাজের নিয়ম ,
জানাজার নামাজের দোয়া , জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থসহ এবং জানাজার নামাজের
গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা
হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন।।ধন্যবাদ।।