আযানের জবাব । আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ
প্রিয় পাঠক আযান মুসলমানদের জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজের শুরুতেই মসজিদ থেকে পবিত্র আযানের শব্দ আমাদের কানে ভেসে আসে। আমরা
অনেকেই আজানের বাংলা উচ্চারণ , আযানের জবাব , আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ , আযান
দেয়ার নিয়ম , আযানের সময় সূচি, বাচ্চা হলে আযান দেওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে
জানতে চাই।
তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আযান কি ? , আযান দেয়ার নিয়ম ,
আজানের বাংলা উচ্চারণ , আযানের জবাব , আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ , বাচ্চা হলে
আযান দেওয়ার নিয়ম , আযানের সময় সূচি ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর
নিয়ে।
আযানের জবাব । আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ
নামাজের ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়ার জন্য যে বাক্যগুলোর দ্বারা মুসল্লিদেরকে দাওয়াত
তথা ডাক দেওয়া হয়, তাকে আযান বলে । পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও জুমার নামাজের
পূর্বে ওয়াক্ত হলে আযান দেয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা ।
আযানে সাতটি কালাম নির্ধারিত আছে। কেবলমাত্র ফজরের ওয়াক্তে একটি কালাম বেশি বলতে
হয়। যিনি আযান দেন তাকে 'মুয়াজ্জিন' বলে। নফল নামাজ, দুই ঈদের ও জানাযার
নামাজের জন্য আযান দিতে হয় না । নামাজের ওয়াক্ত হবার পূর্বে আযান দিলে, ওয়াক্ত
হলে পুনরায় আযান দিতে হবে ।
আজানের বাংলা উচ্চারণ
- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ।
- আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।
- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।
- হাইয়্যা আলাস্সালাহ, হাইয়্যা আলাস্সালাহ।
- হাইয়্যা আলাল ফালাহ, হাইয়্যা আলাল ফালাহ ।
- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ।
- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।
আযানের বাংলা অর্থ
- আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ ।
- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ উপাস্য নেই।
- আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্ তা'আলার প্রেরিত পুরুষ।
- তোমরা নামাজ পড়তে আসো।
- তোমরা কল্যাণের নিমিত্ত আসো।
- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ।
- আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ উপাস্য নেই ।
ফজরের আজান
- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ।
- আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।
- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।
- হাইয়্যা আলাস্সালাহ, হাইয়্যা আলাস্সালাহ।
- হাইয়্যা আলাল ফালাহ, হাইয়্যা 'আলাল ফালাহ ।
- আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাউম ।
- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ।
- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।
ফজরের আযানের বাংলা অর্থ
- আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ ।
- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ উপাস্য নেই।
- আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্ তা'আলার প্রেরিত পুরুষ।
- তোমরা নামাজ পড়তে আসো।
- তোমরা কল্যাণের নিমিত্ত আসো।
- নিদ্রা অপেক্ষা নামাজই শ্রেষ্ঠ (উত্তম)।
- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ।
- আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ উপাস্য নেই ।
আযান সময় সূচি
- ফজর: সুবহে সাদেকের উদয় থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বে চতুর্দিক ফর্সা হলে ফজরের আযানের সময়।
- জোহর: সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার মূল ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের আযানের সময়।
- আসর: কোনো বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণের চেয়ে বর্ধিত হওয়ার সূচনা সময় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসরের আযানের সময়।
- মাগরিব: সূর্য ডুবার পরক্ষণ হতে পশ্চিমাকাশের লালিমা অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামাজের আযানের সময়।
- এশা: মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর হতে সুবহে সাদেক পর্যন্ত এশার নামাজের আযানের সময়।
আযান দেওয়ার নিয়ম
- দুই বাক্যের মাঝখানে একটু সময় থেমে আযানের শব্দগুলো ভিন্ন ভিন্ন করে বলবেন।
- আযানের মধ্যে কোনো শব্দ বাড়বেও না আর কমবেও না।
- আওয়াজ সুমিষ্ট করে বলবেন। গানের মতো করে অথবা স্বরকে অস্বাভাবিকভাবে উঁচু-নিচু করে অক্ষরগুলো বাড়িয়ে বা কমিয়ে কিংবা বেশি টেনে কালামগুলো রদবদল করে বলবেন না ।
- তায়াম্মুম করে আযান দেওয়া জায়েজ।
আযানের জবাব
যারা আযানের কালামগুলো শুনবেন তাদের ওপর জবাব দেওয়া মোস্তাহাব; কেউ কেউ ওয়াজিবও
বলেছেন। মুয়াজ্জিন আযানে যে সমস্ত কালাম বলবেন, শ্রোতারাও তাই বলবেন। কিন্তু
তিনটি স্থানে পরিবর্তন হবে। যথা-
- মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাস্সালাহ দুই বার বলবেন, তখন শ্রোতাগণও নিম্নলিখিত কালাম দুই বার পাঠ করবেন লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম।
- হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময়ও লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম দুই বার পাঠ করবেন।
- ফজরের আজানে মুয়াজ্জিন যখন আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাউম দুই বার বলবেন তখন শ্রোতাগণ সাদ্দাকতা ওয়া বারারতা দুই বার পাঠ করবেন। যার অর্থ : আপনি সত্য বলেছেন ও সৎকাজ করেছেন।
যে অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়া উচিত নয়
- হায়েয ও নেফাসের সময়।
- খুতবা পাঠকালীন সময়।
- নামাজ পড়া অবস্থায়।
- স্ত্রী সহবাসের সময় ।
- পায়খানা ও প্রস্রাব করার সময়।
- খানা-পিনার সময় ।
আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ
আল্লাহুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ্ দা'ওয়াতিত তা-ম্মাতি ওয়াস্সালা-তিল ক্বা-য়িমাতি
আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদ্বীলাতা ওয়াদ্দা রাজাতার রাফী আতা
ওয়াব'আসহু মাক্কা-মামঁ মাহমূদানিল্লাযী ওয়া আদতাহু ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী'আদ ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান ও নামাজের তুমিই প্রভু। তোমার রহমতের
দ্বারা আমাদের নেতা হযরত (সা.)-এর সম্মান বাড়িয়ে দাও এবং তাঁকে তোমার ওয়াদাকৃত
মাকামে মাহমূদে পৌঁছাও। নিশ্চয় তুমি কখনো ভঙ্গ করো না অঙ্গীকার ।
নামাজ ব্যতীত যে সকল স্থানে আযান দেওয়া সুন্নত
- নবজাতক শিশুর কানে।
- ভীষণ ঝড় ও তুফানের সময়।
- ভয়ের সময়।
- মৃগী রোগীর কানে।
- সংজ্ঞাহীন ব্যক্তির কানে।
- যে মুসাফির দল হতে হারিয়ে যায় তাকে দলে খোঁজ নেওয়ার জন্য।
- আগুন লাগলে ।
- প্রচণ্ড যুদ্ধ ও শত্রুর হামলার সময় ।
বাচ্চা হলে আযান দেওয়ার নিয়ম
বাচ্চা হলে আযান দেয়ার জন্য কেবলামুখী হয়ে সন্তানের ডান কানে আযান এবং বাম কানে
একামত দিতে হবে। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক না কেন উভয় ক্ষেত্রেই আযান দেয়া সুন্নত।
আযান সম্পৰ্কীয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
- যদি শহরে একাধিক মসজিদের আযান শুনেন, তবে প্রথমত যে আযান শুনবেন তার জবাব দেবেন।
- হাইয়্যা আলাস্সালাহ বলার সময় ডান দিকে এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময় বাম দিকে মুখমণ্ডল ঘুরাবেন।
- স্ত্রীলোকদের নামাজে আযান ও একামত দিতে হয় না।
- আযান ও একামতের সময় কথা বলা বা কোনো কার্য করা মকরুহ।
- আযানের সময় সালাম দেওয়া বা জওয়াব দেওয়া উভয়ই নাজায়েজ।
- ওয়াক্তিয়া নামাজের জন্য আযান দেওয়া হয়, তবে আযানের জন্য সেই নামাজের ওয়াক্ত হওয়া আবশ্যক । ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দেওয়া হলে ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হবে।
- আযান ও একামত আরবি ভাষায় হওয়া এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আযানের যে সকল শব্দ বর্ণিত আছে অবিকল সে সকল শব্দেই আযান দেওয়া জরুরি।
- মুয়াজ্জিন পুরুষ হওয়া আবশ্যক; মহিলার আযান দেয়া জায়েজ নয় ।
- মুয়াজ্জিন জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া জরুরি।
আযানের জবাব । আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের আযান কি ? , আযান দেয়ার নিয়ম , আজানের
বাংলা উচ্চারণ , আযানের জবাব , আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ , বাচ্চা হলে আযান
দেওয়ার নিয়ম , আযানের সময় সূচি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা
হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন।।ধন্যবাদ।।