আকিকা দেওয়ার নিয়ম । ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
প্রিয় পাঠক সন্তান জন্মগ্রহণের পর পিতা-মাতার অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে সন্তানের
আকিকা দেওয়া। সেজন্য আমরা অনেকেই আকিকা দেওয়ার নিয়ম , গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার
নিয়ম , ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাই।
আপনাদের এই কাজকে সহজ করতে আজকে আমরা হাজির হয়েছি আকিকা দেওয়ার নিয়ম , গরু
দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম , ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম , আকিকার মাসআলা ইত্যাদি
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে। আশা করবো শেষ পর্যন্ত আমাদের পোস্টটি মনোযোগ
সহকারে পড়বেন।
আকিকা দেওয়ার নিয়ম । ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সর্বপ্রথম কাজ হলো সন্তানের নাড়ি কেটে গোসল করিয়ে ডান
কানে
আযান এবং
বাম কানে একামত দিবেন। । তারপর
মধু অথবা
মিষ্টি পানি মুখে দেবেন। সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করা উত্তম । সম্ভব না হলে
১৪ দিনে, ২১ দিনে অথবা সুযোগ মতো যে কোনো সময় করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের ৬৬ তম জেলার নাম কি ? । জ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম । ১০০+ ইসলামিক শিক্ষামূলক উক্তি
প্রিয় নবী (সা.)
নিজের আকিকা নিজে করেছিলেন। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে মাথা মুড়াবেন এবং সম্ভব
হলে চুল পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য দান করবেন। ছেলের জন্য দুই টি এবং মেয়ের জন্য
একটি ছাগল, দুম্বা বা ভেড়া দ্বারা আকিকা করবেন। আকিকা গরু, মহিষ, উট দ্বারাও
দেওয়া যায়। পশু নিখুঁত হওয়া চাই । চামড়া বিক্রি করে গরিবদেরকে দান করে দেবেন।
আকিকা কী বাধ্যতামূলক ?
আকিকা করা হলো সুন্নত। আকিকা করার দ্বারা
আল্লাহ তা'আলা সন্তান-সন্ততিকে সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত থেকে রক্ষা করেন। আকিকা করা
ব্যতীত সন্তান-সন্ততির
মৃত্যু হলে কিয়ামতের দিবসে
সন্তান-সন্ততি,
পিতা-মাতা সুপারিশ করবে না। হাদীস শরীফে আকিকা সম্বন্ধে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত
বর্ণিত রয়েছে।
আকিকার পশুর বর্ণনা
গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি হালাল পশু দ্বারা আকিকা করতে হয়।
আকিকার পশু মোটা তাজা, সুস্থ ও সবল দেখতে সুন্দর হওয়া আবশ্যক। খোড়া, কানা,
অন্ধ, পীড়িত, অতি দুর্বল, অত্যন্ত বৃদ্ধ, লেজ কাটা,
দাঁতহীন,
পাগল ইত্যাদি পশু দ্বারা আকিকা দেওয়া সঠিক নয়। আকিকার পশু সর্ব দিক দিয়ে নিখুঁত
হওয়া চাই । পশুর কান বা লেজ অর্ধেকের বেশি মতভেদে এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা বা
ভাঙ্গা থাকলে আকিকা বৈধ হবে না ।
আকিকার পশুর বয়স
- ছাগল ও ভেড়া এক বছর
- দুম্বা ছয় মাসের
- গরু ও মহিষ দুই বছর
- উট পাঁচ বছর হওয়া আবশ্যক। এর বত্যিক্রম হলে আকিকা জায়েজ হবে না। কিন্তু,
- দুম্বা, ছাগল ছয় মাসের মোটাতাজা হলে দেখতে এক বছরের মতো, তা দ্বারা জায়েজ হবে।
যে সকল পশু দ্বারা আকিকা জায়েজ হয় না
যে সকল পশু দ্বারা আকিকা জায়েজ হয় না সেগুলো হলো-
- বন্য পশু,
- যার লেজ বা কানের এক-তৃতীয়াংশ কেটে গেছে,
- অন্ধ পশু, যার জ্যোতি এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গেছে,
- যে পশু এত শক্তিহীন যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না।
- যে পশুর এক পা ভাঙ্গার কারণে তিন পা দ্বারা চলে চতুর্থ পা দ্বারা কোনো সাহায্য পায় না,
- যে পশুর মোটেও দাঁত নেই বা এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নেই,
- যে পশুর জন্ম হতে কান নেই, কিংবা খুব ছোট তা দ্বারা আকিকা জায়েজ। তবে জন্ম হতে যার এক কান তা দ্বারা জায়েজ হবে না।
- যে পশুর শিং মূল হতে ভেঙ্গে গেছে, তবে যার জন্ম হতে শিং নেই বা ভেঙ্গে গেছে কিন্তু মূল আছে তা হতে আকিকা হবে।
- যে পশুর খুজলি পাঁচড়া বা অন্য কোনো কারণে দেহ সম্পূর্ণ কুশ্রী হয়েছে।
আকিকার পশু জবাই করার নিয়ম
পশু জবাই করার নিয়ম হলো, কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা বিসিমল্লাহি আল্লাহু আকবার
বলে ০৪ টি রগ কাটার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করা । তবে ০৪টি রগের মধ্য হতে যে কোনো
০৩টি রগ কাটলেও জবাই শুদ্ধ হয়ে যাবে।
পশু জবাইয়ের ফরজ
পশু জবাইয়ের
ফরজ
চারটি। যথা :-
- জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ্ বলা, যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ্ না বলা হয় তবুও হালাল হবে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের রগ, পানাহারের রগ এবং দুই পার্শ্বের মোটা শাহরগ দু'টি এ ০৪ টি রগ কাটা। কিন্তু তিনটি কাটা হয়ে থাকলে হালাল হবে, এর কম কাটলে হারাম হবে।
- জবাই করে রক্ত প্রবাহিত করে দেওয়া।
- আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে জবাই করা।
পশু জবাইয়ের ওয়াজিব
জবাইয়ের ওয়াজিব ০১টি। যথা :-
- জবাইকারীর কেবলামুখি অবস্থায় বাম পার্শ্বে পশুর মাথা ও ডান পার্শ্বে পশুর দেহ থাকবে। পশুকে দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে কেবলামুখি করিয়ে শোয়াবেন।
পশু জবাইয়ের সুন্নত
পশু জবাইয়ের সুন্নত ০৪টি। যথা :-
- জবাইয়ের আগে অজু করা
- অস্ত্র ধারালো হওয়া,
- জবাইকারী ও সাহায্যকারী সকলে কেবলামুখি হওয়া এবং বিসমিল্লাহ বলা,
- নিয়ত করা ।
পশু জবাইয়ের হারাম
পশু জবাইয়ের মধ্যে ০৪টি কাজ হারাম। যথা -
- আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করলে কিংবা আল্লাহর সাথে শরিক করে অন্য কারো নাম নিলে,
- কাফির বা মুশরিক লোক জবাই করলে,
- স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ্ না বললে,
- উন্মাদ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক নাবালকে জবাই করলে ।
পশুর যে সকল অংশ হারাম
পশুর ০৮ টি অংশ হারাম। যথা-
- যে রক্ত জবাই করার সাথে লাফিয়ে বের হয়
- গোশতের ওপরের সাদা হয়ে থাকা অংশ
- পিঠের হাড়ের সাদা বস্তু সমূহ
- প্রস্রাবের থলি
- অণ্ডকোষ
- লিঙ্গ
- পায়খানার জায়গা
- পিত্তস্থাথলি
আকিকার নিয়ত
আল্লাহুম্মা হাযিহী আক্বীক্বাতু ইবনী দামুহা বিদামিহী ওয়া লাহা বিলামিহী ওয়া
'আযহা বি-'আযমিহী ওয়া জিলদুহা বি-জিদিহী ওয়া শা‘রুহা বি-শারিহী, ইন্নী
ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাওঁ
ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন; ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া
মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল 'আ-লামীন, লা-শারীকালাহু ওয়া বিযা-লিকা উমিরতু ওয়া
আনা আউয়ালুল মুসলিমীন; আল্লাহুম্মা মিন্কা ওয়া লাকা । বিসমিল্লাহি আল্লাহু
আকবার ।
সন্তান যদি
মেয়ে
হয় তাহলে ইবনের” স্থলে বিনতে বলতে হবে। সন্তান অন্যের হলে ইবনের -এর স্থলে
সন্তানের নাম এর পরে পিতার নাম বলবেন।
গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
সন্তান যদি
ছেলে হয় তাহলে
যে সকল গরুর বয়স ০২ বছরের বেশি এবং উপরে আমরা যে সকল পশু দ্বারা আকিকা জায়েজ
হয় না শিরোনামে যে সকল বিষয় উল্লেখ করেছি সেগুলোর যদি কোনটি না থাকে তাহলে সেই
গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী আকিকা দেওয়া যাবে। কুরবানির গরুর মধ্যে
আকিকা দিলে ছেলের জন্য দুই অংশ এবং
মেয়ের জন্য
এক অংশ নেবেন।
ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম এর মতোই । পার্থক্য শুধু বয়সের
ক্ষেত্রে। আকিকা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার জন্য গরুর বয়স
০২ বছর বা তার বেশি হতে হবে। কিন্তু ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম অনুযায়ী ছাগলের
বয়স ০১ বছর এর বেশি হলেই তা দিয়ে আকিকা দেওয়া যাবে।
ছাগলের বয়স যদি ০৬ মাস বা তার বেশি হয় কিন্তু তা দেখতে এক বছর বয়সী ছাগলের মত
হয় তাহলে তা দিয়ে আকিকা দেওয়া যায়। মেয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ০১টি ছাগল দিয়ে
এবং
ছেলের ক্ষেত্রে
আকিকা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী ০২টি ছাগল দিয়ে আকিকা দিতে হবে।
আকিকার মাসআলা
- ছেলে বা মেয়ে জন্মগ্রহণ করলে উত্তম কাজ হলো, সপ্তম দিবসে তার নাম রাখবেন এবং আকিকা করবেন। এতে সন্তানের বালা-মসিবত কেটে যায় এবং সে যাবতীয় বিপদাপদ হতে বেঁচে থাকে ।
- আকিকার নিয়ম হলো, সন্তান ছেলে হলে দু'টি ছাগল বা দু'টি ভেড়া আর মেয়ে হলে একটি ছাগল বা একটি ভেড়া জবাই করবেন।
- কুরবানির গরুর মধ্যে ছেলের জন্য দুই অংশ এবং মেয়ের জন্য এক অংশ নেবেন। সন্তানের মাথার চুল মুণ্ডাবেন এবং ঐ চুল মেপে তার ওজনের রৌপ্য বা স্বর্ণ দান করবেন।
- সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করা মোস্তাহাব। সপ্তম দিনে না করতে পারলে যখনই করুক না কেন যে বারে সন্তান হয়েছে তার পূর্বের দিন করবেন। যেমন- শুক্রবার সন্তান হলে বৃহস্পতিবার সপ্তম দিবস পড়বে। বৃহস্পতিবার সন্তান হলে বুধবার আকিকা করবেন।
- জন্মের সপ্তম দিনে ০৪টি কাজ করা উত্তম । নাম রাখা, মাথা মুণ্ডান, চুলের ওজনের স্বর্ণ বা রৌপ্য প্রদান এবং আকিকার জন্তু জবাই করা । এর কোনোটির আগে পরে হওয়ার মধ্যে কোনোরূপ বাধ্য-বাধকতা নেই।
- আকিকার গোশত কাঁচা ভাগ করে দেওয়া কিংবা রান্না করে দেওয়া বা দাওয়াত করে খাওয়ানো সবই জায়েজ।
- সম্ভব না হলে ছেলের পক্ষ হতে একটি ছাগল দ্বারাও আকিকা করা জায়েজ আছে। আর আকিকা না করলেও তা গুনাহের কারন হবে না।
আকিকা দেওয়ার নিয়ম । ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে আকিকা দেওয়ার নিয়ম , গরু দিয়ে আকিকা
দেওয়ার নিয়ম , ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম , আকিকার মাসআলা ইত্যাদি
সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যে কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা
হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন।।ধন্যবাদ।।