বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় - যাকাত দেওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক যাকাত একটি ফরজ ইবাদাত। ইসলামের মূল ০৫ টি স্তম্ভের একটি হচ্ছে যাকাত।
আমরা অনেকেই জানতে চাই বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় , যাকাত দেওয়ার নিয়ম
, যাকাত হিসাব, যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ইত্যাদি সম্পর্কে।
চলুন প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জেনে নেই যাকাত কাকে বলে , যাকাত শব্দের অর্থ , যাকাত
হিসাব , বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় , যাকাত দেওয়ার নিয়ম , যাকাত কাদের
উপর ফরজ , যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি , যাকাত ক্যালকুলেটর ইত্যাদি সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় - যাকাত দেওয়ার নিয়ম
ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি বা স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এর
গুরুত্ব এত বেশি যে, নামাজের পরই এর স্থান। কেননা আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদের যত
জায়গায় নামাজের কথা বলেছেন, প্রায় সব জায়গায় যাকাতের আলোচনা হয়েছে। যাকাত
অস্বীকারকারী ইসলামের দৃষ্টিতে কাফির ।
যাকাত কাকে বলে
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে যাকাত বলা হয়, ধনবান ব্যক্তি কর্তৃক নিজের ধন-সম্পত্তি
থেকে ইসলামের রীতি-নীতি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অংশ তথা ৪০ ভাগের একভাগ কুরআনে
বর্নিত নিদিষ্ট খাতে প্রদান করাকে । এটা সম্পদশালীদের ওপর আদায় করা ফরজ।যাকাত যে
আদায় করবে না তার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন -
ওয়াল্লাযীনা ইয়াকনিযূনায্ যাহাবা ওয়াল ফিদ্বাতা ওয়ালা ইয়ুনফিকূনাহা ফী
সাবীলিল্লাহি ফাবাশিরহুম বি'আযা-বিন আলীম । ইয়াওমা ইয়ুহমা ‘আলাইহা ফী নারি
জাহান্নামা ফাতুকওয়া বিহা জিবা-হুহুম ওয়া জুনূবুহুম ওয়া যুহূরুহুম
হাযা-মা-কানাযতুম লিআনফুসিকুম ফাযূকূ মা কুতুম তাকনিযূন ।
অর্থ : যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহ তা'আলার রাস্তায় খরচ করে
না, আপনি [হে মুহাম্মদ (সা.)] তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ জানিয়ে দিন।
সেই দিবস অর্থাৎ ভীষণ কিয়ামতের দিবসে উক্ত স্বর্ণ-রৌপ্য দোযখের আগুনে গরম করা
হবে। পরে তা দ্বারা তাদের চেহারা, পাঁজর, পৃষ্ঠদেশ ইত্যাদি স্থানে দাগ দেওয়া
হবে। আর ফেরেশতাগণ বলতে থাকবে, এটা ঐ সমস্ত বস্তু যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয়
করেছিলে, এখন তার স্বাদ গ্রহণ করো।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের ৬৬ তম জেলার নাম কি ? - যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কাতিলা গাম - ১০০+ ইসলামিক শিক্ষামূলক উক্তি
যাকাত শব্দের অর্থ
যাকাত আরবি শব্দ । এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- বৃদ্ধি পাওয়া, পবিত্রতা লাভ করা ।
যাকাতকে ‘যাকাত’ নামে নামকরণ করার কারণ হলো, যাকাত আদায় করলে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি
পায় এবং এর দ্বারা যাকাত আদায়কারীর আত্মিক পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়।
যাকাত হিসাব
নিজের অতি প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত কারো নিকট যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ
হয়, সে পরিমাণকে ইসলামি শরিয়তে নিসাব বলা হয় এবং উক্ত সম্পদের
স্বত্বাধিকারীকে মালিকে নিসাব বা সাহেবে নিসাব বলা হয় । কোন ব্যক্তি সাহেবে
নিসাব কিনা তা জানার জন্য আপনাকে বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত
ফরজ হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
যে সমস্ত সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয় সেগুলো মোট ০৪ ভাগে বিভক্ত :
- সোনা-রুপার যাকাত
- ব্যবসায়ের মাল-সম্পদ এর যাকাত
- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এর যাকাত
- উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল এর যাকাত বা উশর
সোনা-রুপা ও ব্যবসায়ের সম্পদের নিসাব
অতি প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত (তথা নিজের খাওয়া, পরিধেয় বস্ত্র ও বাসস্থান
ইত্যাদি) ব্যতীত সাড়ে সাত (৭.৫) তোলা সোনা কিংবা সাড়ে বাহান্ন (৫২.৫) তোলা রুপা
বা সমপরিমাণ মূল্যের প্রচলিত মুদ্রা যদি কারো নিকট এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর
মওজুদ থাকে, তবে তার যাকাত দিতে হবে।
তদ্রূপ যদি সোনার অলঙ্কার ও রুপার অলঙ্কার উল্লিখিত পরিমাণে হয়, তাহলে তাতে
যাকাত দিতে হবে। যদি সোনার অলঙ্কার সাড়ে সাত (৭২.৫) তোলা ও রুপার অলঙ্কার সাড়ে
বাহান্ন (৫২.৫) তোলার কম হয়, তাহলে তাতে যাকাত দিতে হবে না ।
যাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ : মাল ও সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা
আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হয়। আর যদি কারো নিকট সোনা-রুপা মিলিয়ে উভয়ের
মধ্যে একটির নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে যাকাত দিতে হবে।
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির নিসাব
গরু ও মহিষের নিসাব হলো ৩০টি। ৩০টির জন্য ১ বছর বয়সের একটি গরু বা মহিষ যাকাত
দিতে হবে। আর ৪০টি গরু ও মহিষের জন্য ২ বছরের একটি বাচ্চা যাকাত দেবে। ৬০টির জন্য
১ বছর বয়সের ২টি বাচ্চা এবং ৬০-এর অধিক প্রতি ৩০টিতে ১ বছরের বাচ্চা আর ৪০টিতে ২
বছরের বাচ্চা দিতে হবে ।
আরো পড়ুন: উকিল/অ্যাডভোকেট/ব্যারিস্টার হতে কি করবেন ? - হ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম - ধৈর্যশীল হতে করণীয় সমূহ কি?
৪০টি ভেড়া বা বকরির জন্য ১ বছরের একটি বাচ্চা যাকাত দিতে হবে। ১২১ হতে ২০০টির
জন্য ২টি ভেড়া বা বকরি এবং ২০১ হতে ৩৯৯টির জন্য ৩টি ভেড়া বা বকরি দিতে হবে।
অতঃপর ৪০০ হতে পরবর্তী প্রতি ১০০শ'-এর জন্য একটি করে বকরি বা ভেড়া যাকাত দিতে
হবে।
৫টি উটের কমে যাকাত হয় না । ৫টি উটের যাকাত ১টি বকরি, ১০টি উটের যাকাত ২ বকরি,
১৫টি উটের যাকাত ৩টি বকরি ও ২০টি উটের যাকাত ৪টি বকরি। ২৫টি উটের যাকাত দুই বছর
বয়সের মাদী উটের একটি বাচ্চা দিতে হবে। ৩৬টি উটের জন্য ৩ বছর বয়সের ১টি মাদা উট
যাকাত দিতে হবে।
উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল এর যাকাত বা উশর
বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত ফসলের উশর ১/১০ অংশ, সেচে উৎপাদিত জমির ফসলের ১/২০ অংশ
অথবা শস্যের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ প্রতি মৌসুমে আদায়যোগ্য।
বিঃদ্রঃ নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন- ঘর-বাড়ি, কাপড়-জুতা,
নৌকা- গাড়ি, নারিকেল-সুপারি, ধান-চাউল, যব-গম ইত্যাদি অধিক মূল্যের হলেও যাকাত
ফরজ হয় না। কিন্তু ঐ সকল মালপত্র ব্যাবসার হলে এগুলোরও হিসাব করে যাকাত দিতে
হবে। মনে রাখতে হবে যে, যাকাতের মাল নিয়ত করে আদায় করতে হবে। নিয়ত না করে দিলে
যাকাত হিসেবে গণ্য হবে না; বরং দান-খয়রাত বলে গণ্য হবে।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় তা জানার পূবে চলুন আমরা বর্তমান হিসেবে
সোনা এবং রূপার বাজার দর জেনে আসি। তাহলে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে ,
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় । বর্তমান বাজার দর হিসেবে -
- সোনার বাজার মূল্য ১ তোলা=১,১২,৯০৮/= সে হিসেবে ৭.৫ তোলা = ৭.৫ ⨯ ১,১২,৯০৮ = ৮,৪৬,৮১০ টাকা। আবার,
- রূপার বাজার মূল্য ১ তোলা=২,১০০/= সে হিসেবে ৫২.৫ তোলা = ৫২.৫⨯২১,০০ = ১,১০,২৫০ টাকা।
অর্থাৎ,
আপনার যদি সারা বছরের খরচ শেষ করে আপনার কাছে ১,১০,২৫০/= টাকা থাকে তাহলে
আপনার উপর যাকাত ফরজ।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় তা জানার পর প্রিয় পাঠক চলুন এবার আমরা
জেনে নেই যাকাত দেওয়ার সঠিক নিয়ম গুলো কি কি। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে
যাকাত দেওয়ার জন্য ৮টি খাতের কথা বর্ণনা করেছেন।এগুলো হলঃ
- ফকির,
- মিসকিন,
- যাকাত আদায়ের কর্মচারি,
- যাদের (মুসলমান করার জন্য) মন জয় করতে হয়,
- গরিব মুসাফির,
- আল্লাহর পথে,
- গোলামি মুক্ত করার জন্য,
- ঋণমুক্ত করার জন্য।
উপরোক্ত আট প্রকারের বিশ্লেষণ এ পদ্ধতিতে করা যায় :
- ফকির, মিসকিন অর্থাৎ যে ব্যক্তি মালিকে নিসাব নয়। নিকটতম আত্মীয়দেরকে যেমন- ভাই, বোন, ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগ্নে-ভাগ্নি, চাচা-চাচী, মামা-মামী, খালা-খালু, ফুফু এদের মধ্যে কেউ যদি ফকির বা মিসকিন হয়, তাহলে তাকে সর্বপ্রথম দিতে হবে।
- এরপর প্রতিবেশী, নিজের গ্রামবাসী, নিজের দেশবাসী, তারপর বিদেশী গরিব-দুঃখীদেরকে । নিজ মহল্লার বা আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে না হলেও দরিদ্র দীনদার পরহেজগার লোক যাকাত পাবার হকদার। ধনী ব্যক্তির বাড়িতে ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যদি বিদেশে অর্থাভাবে কষ্ট পায়।
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে যাদের ঋণ পরিশোধ করার মতো অর্থ নেই ।
- নব দিক্ষিত মুসলমানদেরকে যারা অন্য ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে পৈত্রিক সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়েছে।
- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ব্যক্তিগণকে ।
- দুধ-মা ও দুধ-বোনকে যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে।
- ইমাম, মুয়াজ্জিন, কর্মচারী বা ঘরের চাকর-চাকরানিকে যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে যদি সে মালিকে নিসাব না হয় এবং তার বেতনের পরিবর্তে না হয়।
যাদেরকে যাকাত দেওয়া নিষেধ
যাদেরকে যাকাত দেওয়া নিষেধ করা হয়েছে তারা হলো-
- মালিকে নিসাব অর্থাৎ যার ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ।
- মাতা-পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি এদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই। এদের মধ্যে কেউ অভাবগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য করতে হবে।
- স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না ।
- হাশেমী বংশের লোকদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না, তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।
- যাকাতের মাল দ্বারা মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্থান, মুসাফিরখানা, সড়ক, পুল, পুকুর নির্মাণ করা ও মৃত ব্যক্তিকে কাফন দেওয়া যাবে না ।
- মুসলমান ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীকে যাকাত দেওয়া যাবে না ।
- কোনো কিছু আকাঙ্ক্ষা করে যাকাত দেওয়া যায় না ।
- যাকাত গ্রহণের সম্পূর্ণ যোগ্য ব্যক্তি মনে করে কাউকে যাকাত দেওয়ার পর জানতে পারল যে, গ্রহীতা স্বচ্ছল । এক্ষেত্রে গ্রহণকারীর পক্ষে ঐ মাল রাখা ঠিক হবে না। দাতা ফেরত এনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে দেবে। গ্রহীতা দিতে অস্বীকার করলে দাতার যাকাত আদায় হয়ে যাবে ।
- এক শহরের যাকাত অন্য শহরে পাঠানো মকরুহ। তবে যদি অন্য শহরে আত্মীয়-স্বজন থাকে বা এ শহরে যাকাত দেওয়ার মতো লোক পাওয়া না যায় তাহলে মকরুহ হবে না ।
যাকাত কাদের উপর ফরজ
নিজের অতি প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত কারো নিকট যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ
হয়, সে পরিমাণকে ইসলামি শরিয়তে নিসাব বলা হয় এবং উক্ত সম্পদের স্বত্বাধিকারীকে
মালিকে নিসাব বা সাহেবে নিসাব বলা হয় । সকল সাহেবে নিসাবের উপর যাকাত ফরজ।
আরো পড়ুন: সৌদি মেয়েদের ইসলামিক নাম - বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য - ত দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
উপরের, বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা
হিসাব করে দেখিয়েছি যে বর্তমান সময়ে যাদের সারা বছরের খরচ শেষে ১,১০,২৫০/= এর
অধিক থাকবে তাদের উপর যাকাত ফরজ।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত দুইটি। যথাঃ-
- যাকাতের নিসাব হওয়া অর্থাৎ যে পরিমাণ মালের ওপর যাকাত ফরজ হয় সে পরিমাণ মালের মালিক হওয়া। নিসাবের কম পরিমাণ মালের ওপর যাকাত ফরজ হবে না।
- নিসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছর সময় জমা থাকা। যেমন- কোনো এক ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে, এ পরিমাণ মাল কিছুদিন তার নিকট জমা ছিল কিন্তু তা এক বছর পুরা হওয়ার পূর্বেই খরচ করে ফেলেছে, এ মালের যাকাত দিতে হবে না ।
যাকাত সম্পৰ্কীত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা
-
যদি কেউ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর মারা যায়, তবে তার সম্পদের যাকাত গ্রহণ
করা যাবে না। যদি মৃত ব্যক্তি (মৃত্যুর পূর্বে যাকাত প্রদানের জন্য) অসিয়ত
করে যায়, তবে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে যাকাত গ্রহণ করা যাবে।
-
যদি মৃত ব্যাক্তির অনেক বছরের অনাদায়ী যাকাতের সর্বমোট অংক তার
সমুদয় সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ছেড়ে যায়, তবে যাকাত স্বরূপ তার সম্পদের
এক-তৃতীয়াংশ গ্রহণ করা হবে, যদিও তা তার সম্পূর্ণ যাকাতের জন্য যথেষ্ট
নয়। মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা, যদি সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি দিতে রাজি
হয়, তবে তারা স্বেচ্ছায় যতটুকু দেয় ততটুকু নেওয়া যাবে ।
-
যদি ঋণদাতা এক বছর পর তার ঋণ থেকে ঋণগ্রহীতাকে অব্যাহতি দেয়, তবে ঋণদাতার
সেই এক বছরের যাকাত দিতে হবে না।
-
ঋণগ্রহীতা যদি ধনী হয়, তবে তাকে ঋণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া স্বেচ্ছায় নিজ
সম্পদ ধ্বংস করা বলে ধরে নেয়া হবে। এমতাবস্থায় ঋণদাতা ব্যক্তির সেই
সম্পদের যাকাত দিতে হবে। কেননা সম্পদ স্বেচ্ছায় ধ্বংস করার কারণে যাকাত
মাফ হয় না ।
-
যাকাত দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়তে দিতে হবে এবং যাকে দেবে তাকে বলে দিতে
হবে না যে, এটা যাকাতের টাকা। যাকাতের নিয়ত না করলে যাকাত আদায় হবে না,
বরং তা সাধারণ দানের মধ্যে পরিগণিত হবে ।
-
যাকাতের টাকা দ্বারা মজুরের মজুরি বা চাকরের মাসিক মাহিনা দেওয়া জায়েজ
নেই । এরূপ করলে যাকাত আদায় হবে না ।
- যাকাতের টাকা একজনকে অথবা একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েজ আছে।
-
নগদ টাকা দিয়ে কাপড় কিংবা অন্য কোনো জিনিসের দ্বারা যাকাত দেওয়া জায়েজ
আছে।
-
যদি কোনো গরিব লোকের নিকট পাওনা থাকে আর ঐ টাকা যাকাতে কাটিয়ে দেয়, তবে
যাকাত আদায় হবে না । প্রথমত নগদ টাকা তার হাতে দিয়ে পরে পাওনা হিসেবে
গ্রহণ করা জায়েজ আছে।
- যদি কেউ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর মারা যায়, তবে তার সম্পদের যাকাত গ্রহণ করা যাবে না। যদি মৃত ব্যক্তি (মৃত্যুর পূর্বে যাকাত প্রদানের জন্য) অসিয়ত করে যায়, তবে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে যাকাত গ্রহণ করা যাবে।
- যদি মৃত ব্যাক্তির অনেক বছরের অনাদায়ী যাকাতের সর্বমোট অংক তার সমুদয় সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ছেড়ে যায়, তবে যাকাত স্বরূপ তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ গ্রহণ করা হবে, যদিও তা তার সম্পূর্ণ যাকাতের জন্য যথেষ্ট নয়। মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা, যদি সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি দিতে রাজি হয়, তবে তারা স্বেচ্ছায় যতটুকু দেয় ততটুকু নেওয়া যাবে ।
- যদি ঋণদাতা এক বছর পর তার ঋণ থেকে ঋণগ্রহীতাকে অব্যাহতি দেয়, তবে ঋণদাতার সেই এক বছরের যাকাত দিতে হবে না।
- ঋণগ্রহীতা যদি ধনী হয়, তবে তাকে ঋণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া স্বেচ্ছায় নিজ সম্পদ ধ্বংস করা বলে ধরে নেয়া হবে। এমতাবস্থায় ঋণদাতা ব্যক্তির সেই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। কেননা সম্পদ স্বেচ্ছায় ধ্বংস করার কারণে যাকাত মাফ হয় না ।
- যাকাত দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়তে দিতে হবে এবং যাকে দেবে তাকে বলে দিতে হবে না যে, এটা যাকাতের টাকা। যাকাতের নিয়ত না করলে যাকাত আদায় হবে না, বরং তা সাধারণ দানের মধ্যে পরিগণিত হবে ।
- যাকাতের টাকা দ্বারা মজুরের মজুরি বা চাকরের মাসিক মাহিনা দেওয়া জায়েজ নেই । এরূপ করলে যাকাত আদায় হবে না ।
- যাকাতের টাকা একজনকে অথবা একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েজ আছে।
- নগদ টাকা দিয়ে কাপড় কিংবা অন্য কোনো জিনিসের দ্বারা যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে।
- যদি কোনো গরিব লোকের নিকট পাওনা থাকে আর ঐ টাকা যাকাতে কাটিয়ে দেয়, তবে যাকাত আদায় হবে না । প্রথমত নগদ টাকা তার হাতে দিয়ে পরে পাওনা হিসেবে গ্রহণ করা জায়েজ আছে।
যাকাত ক্যালকুলেটর
যাকাত ক্যালকুলেটরে আজকে আমরা সংক্ষেপে শুধুমাত্র কিভাবে যাকাত হিসাব করবেন তা
তুলে ধরব এবং বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যাকাত ক্যালকুলেটর
নিয়ে আমাদের এই পোষ্টটি পড়ুন: যাকাত ক্যালকুলেটর বিস্তারিত।
যাকাত ক্যালকুলেটর অর্থাৎ আপনার যাকাত হিসাব করার জন্য প্রথমে আপনাকে হিসাব করতে
হবে বিগত এক বছরে আপনার সকল খরচ সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার কাছে বর্তমানে কি পরিমান
সম্পদ রয়েছে।
এই সম্পদের মধ্যে আপনার হাতে থাকা নগদ অর্থ, অলংকার, ব্যাংকে জমা রাখা অর্থ,
ব্যবসায়িক কাজে বিনিয়োগকৃত অর্থ ইত্যাদি যোগ করতে হবে।যোগকৃত সম্পদের পরিমাণ
যদি নিসাব পরিমাণ হয় অর্থাৎ ১,১০,২৫০/= এর অধিক হয় তাহলে যাকাত ক্যালকুলেটর
অনুযায়ী আপনাকে যাকাত প্রদান করতে হবে।
যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। ধনবান ব্যক্তিদের মধ্য হতে যারা নিজেদের
ধন-সম্পদ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ দান না করে তাদের ধন-দৌলত অপবিত্র ও আত্মা
রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা'আলা যাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তাদের কর্তব্য হচ্ছে
নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ আল্লাহর রাস্তায় দান করে মালকে পবিত্র করা। যারা এটা আদায়
করে, আল্লাহ তা'আলা তাদের ধন-সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন এবং তারাই আল্লাহর অনুগত নেক
বান্দা।
আর যে সমস্ত ধনী লোক তা দান করে না, তারা আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট বান্দা রূপে
পরিগণিত হয় এবং দুনিয়ায় তাদের ধন-সম্পদের বরকত থাকে না। তারাই বখিল-কৃপণ ও
আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা।আল্লাহ তা'আলা মূলত একটি অভাবমুক্ত সমাজ গঠনের দৃঢ়
প্রত্যয় নিয়ে বান্দাদের ওপর যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন।
আরো পড়ুনঃ মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন - অনলাইন বাস টিকেট বুকিং বাংলাদেশ - সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায় - দলিল তল্লাশি অনলাইনে
এটি তাঁর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এক মহা পরীক্ষা। তিনি দেখতে চান কে স্বীয়
ইচ্ছানুযায়ী প্রয়োজনাতিরিক্ত ধন-সম্পদ হতে আল্লাহর দেওয়া নির্দিষ্ট অংশ আদায়
করে অভাবী লোকদের সাহায্য করে, কে তাঁর বিধানাবলী যথাযথভাবে পালন করে সৎ লোকদের
মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।
যাকাতের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্বন্ধে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-.
উচ্চারণ : ওয়া আকীমুস্ সালাতা ওয়া আ-তুয্যাকাতা ওয়ারকা'উ মা'আর রাকিঈন।
অর্থ : তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকুকারী তথা নামাজিদের
সাথে নামাজ আদায় করো ।
আরো পড়ুন ঃ
এ সম্পর্কে অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
ওয়ামা আফাক্বতুম্ মিন শাইয়িন ফাহুওয়া ইয়ুখলিফুহূ ওয়া হুওয়া খাইরুর
রা-যিক্বীন।
অর্থঃ তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতিদান দেবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ
রিজিকদাতা ।
এ সম্পর্কে হাদীসে রাসূলেও বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
মান আতাহুল্লাহু মালান ফালাম ইয়ুআদ্দি যাকা-তাহু মুছছিলা লাহূ মালাহু ইয়াওমাল
কিয়ামাতি শুজা'আন আকরা‘আ লাহু যাবীবাতানি ইউত্বাওয়্যাকুহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি
ছুম্মা ইয়া’খুযু বিলাহযিমাতাইহি সুম্মা ইয়াকূলু আনা মালুকা আনা কানযুকা।
অর্থ : আল্লাহ তা'আলা যাকে ধন-দৌলত প্রদান করেছেন কিন্তু সে ব্যক্তি তার যাকাত
আদায় করল না, তার সে ধন-দৌলত কিয়ামতের দিবস সাপে পরিবর্তন করা হবে, যার মাথায়
চুল নাই ও চোখে দু'টি কালো তিলক থাকবে। উক্ত সাপ দ্বারা তার গলায় বেড়ি
স্বরূপ করা হবে। এবং সে সাপ তাকে দংশন করে বলতে থাকবে, আমি তোমার অর্থ, আমি তোমার
সংরক্ষিত সম্পদ।
যাকাত শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর ফরজ করা হয়নি; বরং পূর্ববর্তী নবীগণের
উম্মতদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। আল্লাহ তা'আলা এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে ইরশাদ
করেছেন : আমি তাদেরকে ইমাম বানিয়ে দিয়েছি, তারা আমারই হুকুম অনুযায়ী মানুষকে
পরিচালিত করে। আমি ওহির মাধ্যমে তাদেরকে ভালো কাজ করার, নামাজ আদায় করার এবং
যাকাত দেওয়ার হুকুম দিয়েছি। তারা নিষ্ঠার সাথে আমার ইবাদত-বন্দেগি করতো, আমার
হুকুম ঠিক মতো পালন করতো।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ কথা প্রতীয়মান হলো যে, ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব অত্যধিক,
তাই আমাদের সকলের উচিত হবে ঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে পরিমাণ মতো যাকাত আদায় করা।
অন্যথা দুনিয়াতে অশান্তি ও আখিরাতে দোজখের কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় - যাকাত দেওয়ার নিয়ম : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে যাকাত কাকে বলে , যাকাত শব্দের অর্থ , যাকাত
হিসাব, বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় , যাকাত দেওয়ার নিয়ম , যাকাত কাদের
উপর ফরজ , যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি , যাকাত ক্যালকুলেটর ইত্যাদি সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা
হবে ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন।।। ধন্যবাদ।।