ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম । মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক ঈদ মুসলমানদের জীবনের অন্যতম আনন্দময় দিন। ঈদের দিন শুরু হয় ঈদের
নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে। আজকে আমরা জেনে নেব ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম, মহিলাদের ঈদের
নামাজ পড়ার নিয়ম , ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
আমাদের আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম, মহিলাদের
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম , ঈদ-উল-ফিতর এর নামাজের নিয়ম , ঈদ-উল-আজহা এর নামাজের
নিয়ম, ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম , ঈদের দিনের সুন্নত সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পারবেন।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম। মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
শাওয়াল মাসের ১ তারিখকে ঈদ-উল-ফিতর এবং জিলহজের ১০ তারিখকে ঈদ-উল-আজহা বলা হয় ।
ইসলামে এ দু'টি দিন ঈদ তথা খুশির দিন। এ দু'টি দিনেই শুকরিয়া স্বরূপ দুই রাকআত
করে নামাজ পড়া ওয়াজিব ।
জুমার নামাজ ওয়াজিব হওয়ার জন্য যে সকল শর্ত রয়েছে সে সকল শর্ত ঈদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য !
তবে খুতবার বিধানে ভিন্নতা রয়েছে।
জুমার নামাজের খুতবা ফরজ ও নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত, জুমার খুতবা নামাজের
পূর্বে পাঠ করতে হয়। কিন্তু দুই ঈদের নামাজে খুতবা ফরজ নয়; বরং সুন্নত এবং ঈদের
নামাজের খুতবা নামাজের পরে পাঠ করতে হয়।
অবশ্য দুই ঈদের খুতবা শোনাও জুমার খুতবার মত ওয়াজিব, অর্থাৎ তখন কথাবার্তা বলা,
চলাফেরা করা, নামাজ পড়া সবই হারাম ।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম : ঈদ-উল-ফিতর এর নামাজের বর্ণনা
ঈদ-উল-ফিতর এর দিন ১৩টি কাজ করা সুন্নত। যথা-
- শরিয়তসম্মত সাজগোজ করা,
- গোসল করা,
- মিসওয়াক করা,
- যথাসম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করা,
- সুগন্ধি লাগানো,
- ভোরবেলায় অতি প্রত্যুষে ঘুম থেকে ওঠা,
- ভোরে ভোরে ঈদগাহে গমন করা,
- ঈগদাহে যাওয়ার পূর্বে কোনো মিষ্টি দ্রব্য, যেমন- খেজুর বা অন্য কিছু ভক্ষণ করা,
- ঈদগাহে গমনের পূর্বে সদকায়ে ফিতর দান করা,
- ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া,
- ঈদগাহে এক রাস্তায় গমন করা ও অন্য রাস্তায় ফিরে আসা,
- পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা,
- ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিম্নস্বরে তাকবীর পড়তে পড়তে যাওয়া ।
ঈদের দিনের তাকবীর
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
আরো পড়ুন: উকিল/অ্যাডভোকেট/ব্যারিস্টার হতে কি করবেন ? - হ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম - বাংলাদেশের ৬৬ তম জেলার নাম কি ?
ঈদ-উল-ফিতর এর নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদ-উল-ফিতর এর নামাজ এর নিয়ত
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিল ঈদিল ফিত্বরি মা'আ
সিত্তাতি তাকবীরাতিন ওয়াজিবিল্লাহি তা'আলা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমামি
মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে ছয় তাকবীরের সাথে দুই
রাকআত ঈদুল ফিতরের ওয়াজিব নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করার নিয়ত করলাম,
আল্লাহু আকবার।
এ নিয়ত করে (তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত তুলে তারপর) হাত বাঁধবেন। এরপর সানা
(সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওতাবারা কাসমুকা ওয়াতালা জাদ্দুকা ওয়ালা
ইলাহা গাইরুকা) পড়বেন।
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোবাইল নাম্বার - রাজশাহী টু খুলনা ট্রেনের সময়সূচী - বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর
অতঃপর তিনবার 'আল্লাহু আকবার' বলবেন। প্রত্যেকবার তাকবীরে তাহরীমার মতো উভয় হাত
কান পর্যন্ত তুলবেন এবং তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দেবেন। প্রত্যেক তাকবীরের পর
এতটুকু বিলম্ব করবেন যাতে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ' বলা যায়।
তৃতীয় তাকবীরের পর হাত ছেড়ে না দিয়ে হাত বাঁধবেন। তারপর আ'উযুবিল্লাহ... ও
বিসমিল্লাহ... পড়ে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবে এবং যথারীতি
রুকু-সিজদা করবেন।
অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াবেন। দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে সূরা ফাতিহা ও
অন্য যে কোনো একটি সূরা পড়বে। তারপর পূর্বের নিয়মে তিন তাকবীর বলবেন। তবে এখানে
তৃতীয় তাকবীরের পর হাত বাঁধবেন না ; বরং হাত ছেড়ে রাখবেন এবং আরেকটি তাকবীর বলে
রুকুতে যাবেন। এরপর যথারীতি রুকু, সেজদাহ শেষ বৈঠক এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম : ঈদ-উল-আজহা এর নামাজের বর্ণনা
ঈদ-উল-আজহা এর নামাজের নিয়মও ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের মতোই এবং ঈদ-উল-ফিতরে যে
সকল সুন্নত রয়েছে সেগুলো ঈদ-উল-আজহার ও সুন্নত। পার্থক্য কেবল এটুকু যে,
- ঈদ-উল-ফিতরে ঈদগাহে গমনের পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত, কিন্তু ঈদ-উল-আজহায় সুন্নত নয় ।
- ঈদ-উল-ফিতরে ঈদগাহে গমন করার সময় পথে নিম্নস্বরে তাকবীর বলা সুন্নত, কিন্তু ঈদ-উল-আজহায় উচ্চৈঃস্বরে বলা সুন্নত।
- ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ (কিছুটা) বিলম্বে পড়া সুন্নত, কিন্তু ঈদ-উল-আজহার নামাজ তার চেয়ে ভোরে পড়া সুন্নত।
- ঈদ-উল-ফিতরে নামাজের পূর্বে সদকায় ফিতর দিতে হয়, কিন্তু ঈদ-উল-আজহায় সদকায়ে ফিতর নেই ; বরং নামাজের পর সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কুরবানি করা অবাশ্যক ।
ঈদ-উল-আজহা এর নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতিল ঈদিল আদ্বহা মা'আ
সিত্তাতি তাকবীরাতিন ওয়াজিবিল্লাহি তা'আলা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমামি
মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা'বা শরীফের দিকে মুখ করে ছয় তাকবীরের সাথে দু'
রাকআত ঈদ-উল-আজহার ওয়াজিব নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করার নিয়ত করলাম,
আল্লাহু আকবার।
নিয়ত করে (তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত তুলে তারপর) হাত বাঁধবেন। এরপর সানা
(সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওতাবারা কাসমুকা ওয়াতালা জাদ্দুকা ওয়ালা
ইলাহা গাইরুকা) পড়বেন।
অতঃপর তিনবার 'আল্লাহু আকবার' বলবেন। প্রত্যেকবার তাকবীরে তাহরীমার মতো উভয় হাত
কান পর্যন্ত তুলবেন এবং তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দেবেন। প্রত্যেক তাকবীরের পর
এতটুকু বিলম্ব করবেন যাতে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ' বলা যায়।
তৃতীয় তাকবীরের পর হাত ছেড়ে না দিয়ে হাত বাঁধবেন। তারপর আ'উযুবিল্লাহ... ও
বিসমিল্লাহ... পড়ে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবে এবং যথারীতি
রুকু-সিজদা করবেন।
অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াবেন। দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে সূরা ফাতিহা ও
অন্য যে কোনো একটি সূরা পড়বে। তারপর পূর্বের নিয়মে তিন তাকবীর বলবেন। তবে এখানে
তৃতীয় তাকবীরের পর হাত বাঁধবেন না ; বরং হাত ছেড়ে রাখবেন এবং আরেকটি তাকবীর বলে
রুকুতে যাবেন। এরপর যথারীতি রুকু, সেজদাহ শেষ ভেঠক এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।
মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
মহিলা ও পুরুষের ঈদের নামাজ এর নিয়ম সম্পূর্ন একই রকম। অর্থাৎ নিয়ত করে (তাকবীরে
তাহরীমা বলে হাত তুলে তারপর) হাত বাঁধবেন। এরপর সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা
ওয়াবিহামদিকা ওতাবারা কাসমুকা ওয়াতালা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা) পড়বেন।
অতঃপর তিনবার 'আল্লাহু আকবার' বলবেন। প্রত্যেকবার তাকবীরে তাহরীমার মতো উভয় হাত
কান পর্যন্ত তুলবেন এবং তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দেবেন। প্রত্যেক তাকবীরের পর
এতটুকু বিলম্ব করবেন যাতে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ' বলা যায়।
তৃতীয় তাকবীরের পর হাত ছেড়ে না দিয়ে হাত বাঁধবেন। তারপর আ'উযুবিল্লাহ... ও
বিসমিল্লাহ... পড়ে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবে এবং যথারীতি
রুকু-সিজদা করবেন।
আরো পড়ুনঃ
১০০+ শিক্ষামূলক উক্তি
-
ত দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
-
জ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াবেন। দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে সূরা ফাতিহা ও
অন্য যে কোনো একটি সূরা পড়বে। তারপর পূর্বের নিয়মে তিন তাকবীর বলবেন। তবে এখানে
তৃতীয় তাকবীরের পর হাত বাঁধবেন না ; বরং হাত ছেড়ে রাখবেন এবং আরেকটি তাকবীর বলে
রুকুতে যাবেন। এরপর যথারীতি রুকু, সেজদাহ শেষ বৈঠক এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।
তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে যেগুলো গুরুত্বর্পূ্ণ যেমনঃ
- মহিলাদের জন্য জামায়াত শর্ত নয়।
- পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ ওয়াজিব হলেও মহিলাদের জন্য সুন্নত ।
- যথাযথ পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে।
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
নিয়ত করে (তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত তুলে তারপর) হাত বাঁধবেন। এরপর সানা
(সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওতাবারা কাসমুকা ওয়াতালা জাদ্দুকা ওয়ালা
ইলাহা গাইরুকা) পড়বেন।
অতঃপর ০৭ বার 'আল্লাহু আকবার' বলবেন। প্রত্যেকবার তাকবীরে তাহরীমার মতো উভয় হাত
কান পর্যন্ত তুলবেন এবং তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দেবেন। প্রত্যেক তাকবীরের পর
এতটুকু বিলম্ব করবেন যাতে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ' বলা যায়।
৭ম তাকবীরের পর হাত ছেড়ে না দিয়ে হাত বাঁধবেন। তারপর আ'উযুবিল্লাহ... ও
বিসমিল্লাহ... পড়ে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবে এবং যথারীতি
রুকু-সিজদা করবেন।
অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াবেন। দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে সূরা ফাতিহা ও
অন্য যে কোনো একটি সূরা পড়বে। তারপর পূর্বের নিয়মে ০৫ তাকবীর বলবেন। তবে এখানে
৫ম তাকবীরের পর হাত বাঁধবেন না ; বরং হাত ছেড়ে রাখবেন এবং আরেকটি তাকবীর বলে
রুকুতে যাবেন। এরপর যথারীতি রুকু, সেজদাহ শেষ বৈঠক এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম : গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়
- ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের জন্যও আযান-একামত দিতে হয় না এবং ঈদ-উল-আজহায়ও নয় ।
- নামাজের পর ইমাম সাহেব মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে দু'টি খুতবা পাঠ করবে। উভয় খুতবার মাঝখানে এতটুকু সময় বসবে, যতটুকু সময় জুমার দুই খুতবার মাঝখানে বসা হয় ।
- দুই ঈদের নামাজের পর (অথবা খুতবার পর) দোয়া করা যদিও নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন থেকে প্রমাণিত নয়, কিন্তু সাধারণত অন্যান্য নামাজের পর যেহেতু দোয়া করা সুন্নত, তাই দুই ঈদের নামাজের পরও দোয়া করা সুন্নত হবে (কিয়াস নির্ভর)।
- দুই ঈদের খুতবা প্রথমে তাকবীর দিয়ে শুরু করবে। প্রথম খুতবায় ৯ বার তাকবীর (আল্লাহু আকবার...) বলবে এবং দ্বিতীয় খুতবায় ৭ বার বলবে।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম। মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম, মহিলাদের ঈদের নামাজ
পড়ার নিয়ম , ঈদ-উল-ফিতর এর নামাজের নিয়ম , ঈদ-উল-আজহা এর নামাজের নিয়ম, ১২
তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম , ঈদের দিনের সুন্নত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করলাম।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে
জানাতে পারেন। খুব দ্রুত আমরা আপনাদের প্রশ্ন এবং মতামতের উত্তর প্রদান করা হবে
ইনশাআল্লাহ। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন।।ধন্যবাদ।।