রোজা রাখার নিয়ত - রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজা কত তারিখে ২০২৪
প্রিয় পাঠক আর কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান ২০২৪। আপনারা অনেকেই
আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন রোজা কত তারিখে ২০২৪ , রোজা রাখার নিয়ত এবং রোজা
ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে। আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি রোজা কত তারিখে
২০২৪ , রোজা রাখার নিয়ত এবং রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ নিয়ে।
আজকের আলোচনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আশা করব শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে
পড়বেন। চলুন তাহলে প্রিয় পাঠক আজকে আমরা রোজা কত তারিখে ২০২৪ , রোজা রাখার
নিয়ত , সেহেরির দোয়া , ইফতারের দোয়া এবং রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে আসি।
রোজা রাখার নিয়ত - রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজা কত তারিখে ২০২৪
রোজা বা সাওম কি?
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রোজা বা সাওম। আল্লাহতালা
পবিত্র কোরআনে বলেছেন -
ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম কামা কুতিবা আল্লাজিনা মিন
কবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন।
অর্থ: হে ঈমানদারেরা, তোমাদের উপর রমজান মাসের সাওমকে ফরজ করা হয়েছে যেমন করা
হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
রোজা মূলত একটি ফার্সি শব্দ। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে যাকে সাওম বলা হয়েছে।
রমজান মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ ইফতার পর্যন্ত সকল প্রকার
পানাহার, যৌনাচার এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নামই সাওম বা রোজা।
রোজা কত তারিখে ২০২৪
আরবি ক্যালেন্ডার এর হিসাব অনুযায়ী রোজা কত তারিখে ২০২৪ এর সম্ভাব্য সঠিক উত্তর
হচ্ছে আগামী ১১ই মার্চ দিবাগত রাতে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ, আগামী ১২ই
মার্চ ২০২৪ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান ২০২৪।
মাহে রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত বরকত এবং মাগফেরাতের মাস। প্রতিটি মুসলিমই
বাকি ১১ টা মাস অপেক্ষা করেন পবিত্র মাহে রমজানের অপেক্ষায়। রমজান মাসের ফজিলত
বা গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম একটি হাদিসে
বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পেল কিন্তু তার গুনাহ খাতাগুলো মাফ
করাতে পারল না।
রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজ ইবাদত পালনের সওয়াব পাওয়া যায়, একটি
ফরজ ইবাদত করলে ৭০ টি ফরজ ইবাদত এর সওয়াব পাওয়া যায় এবং যেকোনো ভালো কাজের
সওয়াব মহান রব্বুল আলামীন ৭০ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেন।
রোজা রাখার নিয়ত
কুরআন এবং হাদিস অনুযায়ী রোজা রাখার নিয়ত পৃথকভাবে পাওয়া যায় না। মুসলিমরা
রোজা রাখার নিয়তে বা উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক এ যে খাবার গ্রহণ করে থাকেন তাকে
ইসলামের পরিভাষায় সেহরি বলে।
আপনি যখন সেহরি খেতে উঠবেন তখনই আপনার রোজা রাখার নিয়ত সম্পন্ন হয়ে যাবে।
আমাদের প্রিয় নবী সাঃ রোজা রাখার নিয়ত পৃথকভাবে করেছেন এ ধরনের কোন বর্ণনা
পাওয়া যায় না। কেউ যদি নিয়ত করেন যে, আমি আজ পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখার
নিয়ত করলাম। তাহলে সেটিই যথেষ্ট।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের ৬৬ তম জেলার নাম কি ? - যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কাতিলা গাম - ১০০+ ইসলামিক শিক্ষামূলক উক্তি
তাই সেহেরী খাওয়ার পূর্বে খাওয়ার যে দোয়াটি রয়েছে সে দোয়াটি পড়লেই হবে।
দোয়াটি হচ্ছে:
বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ তায়ালার নামে খানা খাওয়া শুরু করছি এবং আল্লাহ তায়ালার বরকত
প্রার্থনা করছি।
প্রাচীনকাল থেকে আলেম-ওলামারা রোজা রাখার নিয়ত করার ব্যাপারে একটি দুয়া প্রচলন
করেছেন। এটি আমাদের সমাজে প্রচলিত। দোয়াটি হচ্ছে-
রোজা রাখার নিয়ত (বাংলা)
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু,
ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজা রাখার নিয়ত
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত)
করলাম। অতএব তুমি আমার রোজাকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
কেউ যদি এ নিয়ত না করেন তাতেও কোন সমস্যা নেই।
আরো পড়ুন:১০০০+ মুসলিম ছেলেদের আধুনিক নাম - সজনে পাতার উপকারিতা - ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা
রোজা ভঙ্গের কারণ
নিম্নে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ আলোচনা করা হলো:
- পানাহার করলে
- স্ত্রী সহবাস করলে
- ইসলাম ত্যাগ করলে
- ইচ্ছা করে মুখ ভরে বমি করলে
- মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
- গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
- শিঙ্গা লাগানো
- প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
- রোজাদারকে জোর করে কিছু খাওয়ালে
- হস্তমৈথুন করলে
- ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
- ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরও কিছু খেলে
- কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
- জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
- রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে।
- বিড়ি-সিগারেট বা হুকা সেবন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
- আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুথুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
যে সকল কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না
- অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়া
- স্বপ্নদোষ হওয়া
- মুখে থুতু আসলে গিলে ফেলা ।
- যেকোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগানো
- ভুলে স্ত্রী সহবাস করলে
- গোসল করা বা বারবার কুলি করা ।
- মেসওয়াক করা
- শরীর ,মাথা ,দাড়ি ইত্যাদিতে তেল লাগালে ।
- চোখে সুরমা লাগানো বা কোনো ওষুধ দেওয়া ।
- আতর লাগানো বা তার ঘ্রাণ নেওয়া ।
- ভুলে কিছু পান করলে
- অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোয়া, ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করলে ।
- কানে পানি দেয়া বা অনিচ্ছাবশত চলে যাওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না
- রোজা অবস্থায় দাঁত উঠলে এবং রক্ত পেটে না গেলে ।
- সাপে কামড় দিলে
আরো পড়ুন: উকিল/অ্যাডভোকেট/ব্যারিস্টার হতে কি করবেন ? - হ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম - ধৈর্যশীল হতে করণীয় সমূহ কি?
ইফতারের দোয়া
আবু দাউদ শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী ইফতারের দোয়া হচ্ছে-
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার
রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া
রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময়
বলতেন-
জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থ : ইফতারের মাধ্যমে পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ
চান সাওয়াবও স্থির হলো।
মুহাম্মদ(সা.) যেভাবে ইফতার করতেন
আনাস ইবন মালিক (রাঃ)-কে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মাগরিবের নামায আদায়ের পূর্বে পাকা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি পাকা
খেজুর না পেতেন, তখন তিনি শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি তাও না হতো,
তখন তিনি কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।( আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং-২৩৪৮)
সালমান ইবন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখে, তখন সে যেন খেজুর
দ্বারা ইফতার করে। আর সে যদি খেজুর না পায়, তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে,
কেননা পানি পবিত্র।(
আবু দাউদ শরীফ
হাদিস নং-২৩৪৭)
রোজা রাখার নিয়ত - রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজা কত তারিখে ২০২৪ : লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে রোজা কত তারিখে ২০২৪ , রোজা রাখার নিয়ত ,
সেহেরির দোয়া , ইফতারের দোয়া এবং রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করলাম। আমাদের আলোচনাটি আশা করি আপনার ভালো লেগেছে।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন এবং
গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে
ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।