মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা - মাদকাসক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট

প্রিয় পাঠক মাদকাসক্তি বর্তমান সমাজের একটি ভয়াবহ সমস্যা। আজকে আমরা মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা কিভাবে লিখতে হয় সে সম্পর্কে জানব এবং মাদকাসক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট এ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
মাদকাসক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট
চলুন তাহলে প্রিয় পাঠক আমরা মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা এর কিছু নমুনা দেখে আসি। আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি মাদকাসক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট এ সঠিকভাবে লিখতে পারবেন।

মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা - মাদকাসক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট

ভূমিকা

মাদকাসক্তি বলতে বুঝায় বিভিন্ন মাদক বা যেকোনো একটি মাদকে আসক্ত হওয়াকে। মাদক বলতে মাদক জাতীয় দ্রব্য যেমন: বিড়ি, সিগারেট,গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, আফিম, মদ, হেরোইন, কোকেন, মরফিন ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য কে বুঝায়। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বর্তমানে অন্যতম প্রধান সমস্যা মাদকাসক্তি।

মাদকের উৎস

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক প্রচলিত রয়েছে। যেমন: বাংলাদেশ এবং ভারতে গাঁজা, চৌহানি, রেন্ডি, তামাক, ফেনসিডিল ইত্যাদি। আফগানিস্তান ইরান পাকিস্তানের আফিম, হেরোইন। লাতিনা আমেরিকার দেশ বিশেষ করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ইত্যাদিতে কোকেন, মরফিন। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকোতে মারিজুয়ানা, প্যাথিড্রিন। লাওস মায়ানমার থাইল্যান্ডে ইয়াবা। 
এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের মদ প্রচলিত। বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত মাদক মাদক চোরাকারবারিদের মাধ্যমে বিশ্বের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খুব সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। যার ফলে মাদকের করালগ্রাসে আক্রান্ত সমগ্র বিশ্ব।

মাদকাসক্তির কারণ

মানুষ মূলত বিভিন্ন কারণে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। এর কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই তবে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো:

সঙ্গ দোষ 

মাদকাসক্তি বিশেষ করে যুব সমাজের বিভিন্ন মাদকের আসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ সঙ্গদোষ। কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। মাদকে আসক্ত প্রায় ৫০% মানুষই প্রথম মাদক গ্রহণ করে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মীর মাধ্যমে।

অতি উৎসাহী মনোভাব

মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই বিশেষ করে যুব সমাজের উৎসাহী মনোভাব থাকে। এই মনোভাবই অনেককে মাদকের দিকে অগ্রসর করে। স্বাভাবিকভাবেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ একটু বেশি থাকে। যার ফলে উঠতি বয়সী তরুণ এবং যুবকেরা মাদকাসক্তির শিকার হয়।

পারিবারিক কলহ

বর্তমান সময়ে পারিবারিক কলহ অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক বন্ধন, বিশ্বাস এবং নৈতিকতা হ্রাস পাওয়ার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই অনেকেই পারিবারিক কলহের শিকার হন। যা খুব সহজেই একজন ব্যক্তিকে মাদকের দিকে আসক্ত করে ফেলে।

বিচ্ছেদ 

বিবাহ বিচ্ছেদ, ভালবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ, পারিবারিক বিচ্ছেদ এর ফলে মানুষ সহজেই মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

মানসিক হতাশা এবং দুশ্চিন্তা

মানসিক হতাশা এবং দুশ্চিন্তা মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ। অনেক মাদকাসক্তই মনে করেন মাদক গ্রহণের ফলে তারা মানসিক হতাশা এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারেন। যার কারণে তারা সহজেই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে দারিদ্রতা, বেকারত্ব ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ সহজে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

মাদকের সহজলভ্যতা

বর্তমান সময়ে মাদক একেবারে সহজলভ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একেবারে হাতের নাগালেই প্রায় সব রকমের মাদক পাওয়া যায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চল, অত্যন্ত গ্রামাঞ্চল এবং অভিজাত এলাকায় খুব সহজেই যেকোনো ধরনের মাদক পাওয়া যায়। মাদকের এই সহজলভ্যতা মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ।

মাদকাসক্তির ফলাফল

মাদকাসক্তির ফলাফল খুবই ভয়াবহ হয়। এর স্বল্পকালীন থেকে দীর্ঘকালীন ফলাফল আরো ভয়াবহ। মাদকাসক্তির ফলে পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদ, চুরি -ছিনতাই, অনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে যুবসমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার এই মাদক। মাদকাসক্তির ফলে স্বাস্থ্য দ্রুত ক্ষতি হয় এবং সকল প্রকার মাদকের পরিণতি অকাল মৃত্যু। এছাড়াও

ইয়াবা সেবনের ফলাফল:

  • স্মরণশক্তি নষ্ট হয়
  • আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়
  • যৌন শক্তি নষ্ট হয়
  • সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হ্রাস পায়
  • মস্তিষ্কে রক্তক্ষরন হয়
  • লিভার এবং কিডনি নষ্ট হয়
  • রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়
  • হার্ট এটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়
  • মানসিক বিকলাঙ্গতা বৃদ্ধি পায়

গাজা সেবনের ফলাফল:

  • ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা হ্রাস পায়
  • দৃষ্টিশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়

ফেনসিডিল এবং হেরোইন সেবনের ফলাফল:

  • পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয়
  • সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়
  • ফুসফুস এবং হার্টের সমস্যা হয়

মদপানের ফলাফল:

  • গ্যাস্ট্রিক ও আলসার হয়
  • লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার হয়

ধূমপানের ফলাফল:

  • মুখে ঘা ও ক্যান্সার হয়
  • ফুসফুসে ক্যান্সার হয়
  • হার্ট এটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়
  • মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়

ইনজেকশন এর মাধ্যমে মাদক গ্রহণের ফলে:

বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি হেপাটাইটিস বি, সি, রক্তবাহিত বিভিন্ন রোগ এবং এইডস এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

মাদকাসক্তি এর প্রতিকার:

বর্তমান সমাজে মাদক যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে খুব সহজেই এর প্রভাব থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মাদকের বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব। নিচে মাদকাসক্তি এর প্রতিকার এর উপায় সমূহ আলোচনা করা হলো:

সচেতনতা বৃদ্ধি

মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ, মাদক সেবনের ফলাফল ইত্যাদি সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণে সচেতনতা বৃদ্ধি মূলক কার্যক্রম যেমন সভা, সেমিনার, লেখনি, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি প্রচার করতে হবে। এক কথায় সমাজের প্রতিটি স্তরে মাদক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ধর্মেই মাদক সেবনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই প্রত্যেককেই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে তাহলে খুব সহজেই মাদক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা

মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ পারিবারিক অশান্তি-কলহ ইত্যাদি। তাই পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে পারলে মাদকাসক্তি প্রতিরোধ অনেকাংশেই সম্ভব। আপনার সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ

মাদক চুরাকারবারীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার সহায়তায় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। মাদক সমস্যা প্রতিরোধের পূর্বেই এ সকল দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে কারণ মাদক চোরাকারবারিরা কর্মকর্তার মাধ্যমে খুব সহজেই পার পেয়ে যায়।

বন্ধু নির্বাচনের সর্তকতা

মাদকাসক্তদের অধিকাংশই প্রথম মাদক সেবন করে থাকেন বিভিন্ন বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা উচিত।

আইনের কঠোরতা

মাদকের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সবাইকে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এর পাশাপাশি মাদক প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এই দপ্তরকে আইনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।

বৈশ্বিক আন্দোলন

মাদক কোন দেশের একক সমস্যা নয়। বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এই সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২৬০ মিলিয়ন মানুষ মাদকের সাথে জড়িত। মাদককে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিরোধ করার জন্য জাতিসংঘ প্রতিবছর ২৬ জুন ” আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস” হিসেবে পালন করে আসছে। 
মাদকের ভয়াবহতা প্রতিরোধে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ দপ্তর (UNODC) পরিচালনা করে আসছে। তারপরেও মাদকের ভয়াবহতা হ্রাস পাচ্ছে না। তাই প্রতিটি দেশকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয়ভাবে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

চিকিৎসা ও পুনর্বাসন

মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পুনরায় স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করা খুবই জরুরী। সরকারের একার পক্ষে এত বড় কাজ করা সম্ভব নয় সেজন্য সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে সহায়তা করা

দেশের মাদকের চোরাচালান প্রতিরোধে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তা করতে হবে। এজন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি হট লাইন নাম্বার চালু করেছে। নাম্বারটি হচ্ছে:+৮৮০-১৯০৮-৮৮৮-৮৮৮।

উপসংহার:

মাদক আমাদের ব্যক্তিগত কোন সমস্যা নয় এটি একটি জাতীয় সমস্যা এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা তাই মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই সম্ভব এই কঠিন সমস্যা সঠিকভাবে মোকাবেলা করার। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গড়ে তুলি এবং মাদককে না বলি।

মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা - মাদকাসক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট : লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা তুলে ধরলাম। আশা করব রচনাটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এই রচনাটির মাধ্যমে আপনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন।

এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা

আমাদের ফেসবুক পেইজ