মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং মাশরুম উপকারিতা
প্রিয় পাঠক বর্তমান সময়ে মাশরুম একটি জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত। আপনি কি
জানেন ঘরে বসে মাশরুম চাষ করা যায়? যদি আপনি মাশরুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
চান তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমরা মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং মাশরুম এর
উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আমাদের আজকের আলোচনা থেকে আপনি যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন। মাশরুম কি?, মাশরুম এর
পুষ্টিগুণ, মাশরুম চাষ পদ্ধতি, মাশরুম এর উপকারিতা, মাশরুম খাওয়ার নিয়ম মাশরুম
চাষের ট্রেনিং কোথায় হয় এবং মাশরুমের দাম সম্পর্কে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং মাশরুম এর উপকারিতা
মাশরুম কি?
মাশরুম মূলত এক ধরনের ছত্রাক। অন্যান্য উদ্ভিদের মতো এটিও একটি উদ্ভিদ । চীন
এবং কোরিয়া থেকে মানুষ প্রথম মাশরুম খাওয়ার ধারণা পেয়ে থাকে।
বাংলাদেশেও
বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে মাশরুম। আমাদের দেশে অনেকের কাছে এটি
ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত। সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির মাশরুম
রয়েছে।
মাশরুম এর পুষ্টিগুণ
প্রিয় পাঠক চলুন মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পূর্বে আমরা জেনে আসি
মাশরুম এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।মাশরুম একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। চলুন এক নজরে
দেখে নেই মাশরুমের পুষ্টিগুণ সমূহঃ-
- ক্যালোরি
- শর্করা
- স্নেহ
- প্রোটিন
- থায়ামিন
- রিবোফ্লাভিন
- নায়াসিন
- প্যান্টোফেনিক
- ভিটামিন সি
- ক্যালসিয়াম
- কপার
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- জিংক
মাশরুম চাষ পদ্ধতি
মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে মাশরুম তৈরির জন্য
কি কি উপকরণ প্রয়োজন। চলুন এক নজরে দেখে নেই উপাদানসমূহঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি বেশি প্রচলিত।
চাষীদের জন্য স্পন ভর্তি সাবষ্ট্রেট সহ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত পিপি ব্যাগ সরবরাহ
করা হয়। সরবরাহকৃত এসব ব্যাগ থেকে চাষীরা ফসল উৎপাদন করে থাকেন। মোটামুটি ৫০০
গ্রাম ওজনের এসব ব্যাগের ভিতরে উৎপাদন হচ্ছে-
- কাঠের গুড়া = ৬৪%
- গমের ভূষি = ৩২%
- ধানের তুষ =৪%
উক্ত মিশ্রণের সাথে সামান্য পরিমাণ চুন এবং
পানি
মিশানো হয়। প্যাকেটগুলো খড়ের চাষা বিশিষ্ট বাঁশের বেড়া ও পাকা মেঝের ঘরে কাঠ ও
বাঁশের তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখতে হবে।অত:পর ব্যাগের দুপাশে অধর্চন্দ্রাকৃত্রির
করে কেটে কাটা অংশটির খানিকটা চেছে ফেলে দিতে হবে।
চাছার পর ব্যাগটি পরিষ্কার পানিতে ২১-৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।ব্যাগটি অত:পর
পরিষ্কার ফ্লোর বা তারের জালির ওপর আধাঘন্টা সময় উল্টে রাখতে হবে যাতে ভেতরের
বাড়তি পানি ঝড়ে যায়।এবার চাষঘরে কাঠের ব্যাক বা বাঁশের মাচায় পরিমিত বিছিয়ে
ব্যাগগুলো তার ওপর সারিবদ্ধভাবে রাখতে হবে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতিতে বাইরের তাপমাত্রা কম থাকলে ব্যাগের উপর পলিথিন ঢেকে দিয়ে ২/৩
দিন রাখতে হবে যাতে ব্যাগের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ সময় ঘরের আর্দ্রতা ৮০%
এবং তাপমাত্রা ২৫-৩০০ সে. হওয়া দরকার। ঝরণা দিয়ে-ব্যাগগুলোতে নিয়মিত পানি স্প্রে
করতে হবে।
পলিথিন ডাকা থাকলে ৩/৪ বার ১০-১৫ মি. সময় ডাকনা সরিয়ে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে
দিতে হবে।২/৩ দিন পর ব্যাগের কাটা অংশ দিয়ে সাদা পিন সদৃশ অংশ দেখা যায়। আরো ২/৩
দিন পর মাশরুম বড় হলে সংগ্রহ করতে হবে।
অন্য দুপাশ থেকে অত:পর একইভাবে চেছে দিয়ে পানি স্প্রে করলে নতুনভাবে মাশরুম
উৎপাদন হবে।
মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এজন্য ম্যালাথিয়ন (০.১%) স্প্রে করা যেতে
পারে। এছাড়া ফর্মালিডিহাইডে (৪%) তুলা ভিজিয়ে সানস্ট্রেটে ঘসে দিলে সবুজ বাদামী
বা নীল মোল্ড দূর হবে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী মাশরুম চাষ করলে একটি মাশরুমের ব্যাগ থেকে ৩/৪ বার
ফসল তোলা যায়।
তথ্যসূত্রঃ
কৃষি তথ্যসূত্র(এআইএস)
মাশরুম এর উপকারিতা
প্রিয় পাঠক মাশরুম এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। মাশরুম বহু গুনে গুণান্বিত
একটি সাধারণ খাদ্য। একটি মাশরুমে যতগুলো উপকারিতা রয়েছে অন্য একক খাদ্যে এরকম
খুব কমই রয়েছে। চলুন জেনে নেই মাশরুম এর উপকারিতাগুলোঃ
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
- ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে
- চর্মরোগ প্রতিরোধ করে
- ওজন কমাতে সহায়তা করে
- বয়সের ছাপ কমায় মাশরুম
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- টিউমার প্রতিরোধ করে
- সর্দি কাশির মতো ছোটখাটো রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- দাঁত এর গঠন শক্তিশালী করে
- হাড়ের ক্ষয় রোধ করে
- হাড় মজবুত করে
- ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করে
- শরীরের বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি বডি তৈরি করে
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে
- চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
- ব্রণের সমস্যা প্রতিরোধ করে
- ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
- কিডনি ভালো রাখে
- হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধে সহায়তা করে
- চুল পড়া ও পাকা বন্ধ করে
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
অন্যান্য সবজির মতোই মাশরুম বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। পাশাপাশি
বিভিন্ন মুখরোচক খাবার যেমন সুপ নুডুলস ইত্যাদি সাথেও একত্রে রান্না করে খাওয়া
যায় এর পাশাপাশি আলাদা রান্না করে ভাজি করে মাশরুম খাওয়া যায়।
তবে, অবশ্যই চাষ করা মাশরুম খেতে হবে। মনে রাখতে হবে যত্রতত্র উৎপাদিত মাশরুম
খাওয়া কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যত্রতত্র উৎপাদিত মাশরুম বিষাক্ত হওয়ার
সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই অবশ্যই খাবার হিসেবে মাশরুম চাষ
পদ্ধতি অনুযায়ী উৎপাদিত মাশরুম খেতে হবে ।
মাশরুম চাষের ট্রেনিং কোথায় হয়
বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
ঢাকা অদূরে সাভারে অবস্থিত মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের
মাশরুম চাষ পদ্ধতি , বিক্রয় এবং বিপণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সম্পর্কে আরো
জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ
মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট
মাশরুম এর দাম
অন্যান্য ফসলের চাইতে মাশরুমের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।মাশরুম চাষ
পদ্ধতি অনুযায়ী প্রজাতি ভেদে মাশরুমের দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৪০০০
টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে তাজা ওয়েস্টার মাশরুম ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। শুকনো
ওয়েস্টার মাশরুম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
বাটন মাশরুমের মূল্য ৫০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কান প্রজাতির
মাশরুম ২০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সবচাইতে দাম বেশি ঋষি প্রজাতির
মাশরুমের। প্রতি কেজি ঋষি মাশরুম ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে মাশরুম কি?, মাশরুম এর পুষ্টিগুণ, মাশরুম
চাষ পদ্ধতি, মাশরুম এর উপকারিতা, মাশরুম খাওয়ার নিয়ম মাশরুম চাষের ট্রেনিং
কোথায় হয় এবং মাশরুমের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করব আমাদের
আলোচনা থেকে আপনি মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং মাশরুম এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
ধারণা পেয়েছেন।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন এবং
গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে
ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।