সাইবার ক্রাইম কী ? । সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
প্রিয় পাঠক বর্তমান সময়ে সাইবার ক্রাইম এর মাত্রা অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি
পেয়েছে। আজকে আমরা আপনাদের সামনে সাইবার ক্রাইম কি?, সাইবার ক্রাইম এর
প্রকারভেদ, সাইবার ক্রাইম অভিযোগ করার নিয়ম এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
বিস্তারিত আলোচনা করব।
সাইবার ক্রাইম থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে সাইবার ক্রাইম কী? এবং সাইবার অপরাধ
প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। তাই আশা করব আমাদের পোস্টটি আজকে
মনোযোগ সহকারে পড়বে।
সাইবার ক্রাইম কী ? - সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
সাইবার ক্রাইম কী?
সাইবার ক্রাইম বলতে মূলত বুঝায় তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে
যে সকল অপরাধ সংগঠিত হয়। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা যেমন মানুষের দৈনন্দিন
জীবনযাত্রাকে সহজ এবং সাবলীল করেছে এর পাশাপাশি অপরাধ জগতেও নতুন নতুন অপরাধের
উদ্ভব ঘটেছে।
মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহার করে হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইলিং,
ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, অনলাইন জালিয়াতি, সাইবার বুলিং ইত্যাদি সাইবার ক্রাইম।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে সাইবার ক্রাইম এর প্রতিনিয়ত পরিবর্তন
হচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
সাইবার ক্রাইম কত প্রকার
সাইবার ক্রাইম কী? জানার পর চলুন আমরা জেনে নেই সাইবার ক্রাইম কত প্রকার? সাইবার
ক্রাইম এর প্রকারভেদ বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে অনলাইন জগতের প্রায় সকল
ক্ষেত্রেই মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। চলুন আমরা সাইবার ক্রাইম এর কিছু
প্রকারভেদ জেনে নেই যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেঃ
- জালিয়াতি
- আর্থিক অপরাধ
- সাইবার সন্ত্রাস
- সাইবার চাঁদাবাজি
- সাইবার যুদ্ধ
- ভাইরাস
- ফিশিং
- স্পাম
- অবৈধ, অশ্লীল এবং আপত্তিকর অডিও এবং ভিডিও প্রচার, প্রসার এবং হয়রানি
- তথ্য ফাঁস
- হ্যাকিং
- ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি
- সফটওয়্যার পাইরেসি
সাইবার ক্রাইম অভিযোগ করার উপায়
- সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত যেকোন অভিযোগ করার জন্য আপনি আপনার নিকটস্থ থানার সাইবার সেলে যোগাযোগ করতে পারেন। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি থানায় নতুন করে সাইবার সেল গঠন করা হয়েছে।
- সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত হেল্পলাইন ১৯৩০ কল করে আপনার অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে পারেন।
- এর পাশাপাশি সাইবার আদালতের মাধ্যমে সরাসরি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিপক্ষে মামলা করা যায়।
- মহিলারা সাইবার অপরাধের শিকার হলে এই লিংকে ক্লিক করে সহজেই বাংলাদেশ পুলিশের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারেন লিংকটি হলো= সাইবার স্পেস -নারী সেবা।
- পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সাইবার ক্রাইম বিভাগ হট লাইন নাম্বারেও ফোন দিয়ে সরাসরি অভিযোগ জানানো যায় হট লাইন নাম্বারটি হচ্ছে-০১৩২০০০০৮৮৮।
-
জাতীয় জরুরি সেবা 999 এ যোগাযোগের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম এর ব্যাপারে অভিযোগ জানানো যায়।
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আজকে আমরা আপনাদেরকে দেব। আশা করব
এর মাধ্যমে আপনি আপনার তথ্য যেভাবে নিরাপদ রাখতে পারবেন পাশাপাশি আপনিও নিরাপদ
থাকবেন।
জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড
- পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না
- ওটিপি শেয়ার করবেন না
- যেকোনো লিংকে ক্লিক না করা
- নিজের গোপনীয়তা নিজে রক্ষা করা
- প্রাইভেসি এন্ড সিকিউরিটি অপশন
- অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
- আইনি সহায়তা গ্রহণ
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোবাইল নাম্বার - রাজশাহী টু খুলনা ট্রেনের সময়সূচী - বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর
জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায় এর যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে
গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। আপনার
গুরুত্বপূর্ণ
অনলাইন মাধ্যম গুলোতে জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
আমরা অনেক সময় খুবই সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি যেগুলো সহজেই হ্যাকাররা হ্যাক
করতে পারে সেজন্য আমাদেরকে একটু জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
চলুন আমরা সাধারণ পাসওয়ার্ড এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড কিরকম হয় সেটি দেখে নেইঃ
- সাধারণ পাসওয়ার্ডঃ 12345abcd
- মধ্যম মানের পাসওয়ার্ডঃ ab123cd
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ডঃ Abc@1234d, 1a2B3@cD, A1b@2C#34
পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না
আপনার ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড কখনো কারো সাথে শেয়ার করবেন না। অনেক সময় আমরা
পাসওয়ার্ড এর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করি না। যেটি আমাদের সাইবার
ক্রাইম এর শিকারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনার নিজের তথ্য এবং আপনার
গোপনীয়তা রক্ষার অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে পাসওয়ার্ড শেয়ার না করা।
ওটিপি শেয়ার করবেন না
বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক সময় আমাদের ফোনে ওটিপি বা ওয়ান টাইম
পাসওয়ার্ড আসে। নিজের ফোনে আসা কোন ওটিপি কারো সাথে শেয়ার করবেন না। ওটিপি গুলো
অতি গোপনীয়তার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
যেকোনো লিংকে ক্লিক না করা
সাইবার ক্রাইম এর সহজ মাধ্যম হচ্ছে ফিশিং লিংক তৈরি। ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক
ইত্যাদিতে আসা কোন লিংকে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্লিক করবেন না।
অনেক সময় হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরনের ফিশিং লিংক তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ,
ফেসবুক,
ইত্যাদির মাধ্যমে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে যারা ক্লিক করে তাদের তথ্যের একটি বিরাট অংশ
হ্যাকারদের মাঝে চলে যায়। সেজন্য আপনার কাছে কোন ধরনের লিংক আসলে ক্লিক করার
পূর্বেই সেই লিংক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
নিজের গোপনীয়তা নিজে রক্ষা করা
নিজের সকল তথ্য বিশেষ করে গোপনীয় তথ্যগুলো সামাজিক গণমাধ্যমে শেয়ার না করাই
ভালো। আমরা অনেক সময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় তথ্যগুলো খুব সহজেই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করি।
যেটি হ্যাকারদের কাজকে আরো সহজ করে দেয়। আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করেই হ্যাকাররা
সহজেই আপনার সাইটগুলো দখলে নিতে পারে। তাই সাইবার ক্রাইম থেকে নিজেকে রক্ষা
করতে হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের কোন তথ্য শেয়ার করার পূর্বে অবশ্যই
সতর্কতা অবলম্বন করুন।
প্রাইভেসি এন্ড সিকিউরিটি অপশন
সকল ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইন সাইটে প্রাইভেসি এন্ড সিকিউরিটি অপশন
থাকে। এই অপশনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই অপশনটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে
পারেন তাহলে খুব সহজেই আপনি সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারবেন।
যে সকল ক্ষেত্রে
Two Step Verification
এর সুযোগ রয়েছে সেই ক্ষেত্রে Two Step Verification ব্যবহার করতে হবে যা
আপনার সাইবার নিরাপত্তাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিবে। মনে রাখতে হবে প্রাইভেসি এন্ড
সিকিউরিটি অপশন এ আপনার ব্যবহারের দক্ষতার উপর আপনার তথ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে
নির্ভরশীল।
আরো পড়ুনঃ ১০০+ শিক্ষামূলক উক্তি - ত দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম - জ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
নিয়মিত আপনার সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রাইভেসি এন্ড সিকিউরিটি অপশনটির
দিকে খেয়াল রাখুন।সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অস্বাভাবিক কোন কিছু পরিলক্ষিত হলে
সাথে সাথে সে বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস গুলোতে ইচ্ছে মত যেকোনো ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করবেন
না। যে কোন অ্যাপস ব্যবহারের পূর্বে সেই অ্যাপস সম্পর্কে বিস্তারিত যাচাই করে
নিবেন। বর্তমান সময়ে বহু অ্যাপস রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে অ্যাপস কোম্পানিগুলো
সহজেই গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।
আইনি সহায়তা গ্রহণ
আপনার যদি মনে হয় আপনি সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছেন তাহলে দেরি না করে অতি
দ্রুত সাইবার ক্রাইম অভিযোগ করার উপায় এ আমরা যে সকল মাধ্যমে কথা বলেছি
আপনাদেরকে তার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সাইবার ক্রাইম কী ? - সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায় : লেখক এর মতামত
আজকে আমরা আপনাদের সামনে সাইবার ক্রাইম কী? এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করব আমাদের আলোচনাটি আপনাকে আপনার
নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে আপনি ব্যবহার
করতে পারবেন।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন এবং
গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে
ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।