ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা- ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ- ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ ২০২৩

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন যে ০৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের আক্রমণের মধ্য দিয়ে পুনরায় ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হয়েছ। আজকে আমরা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা বা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ ২০২৩ এবং ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ কি সে সম্পর্কে জানব।
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা- ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ
ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা বা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ ২০২৩জানার পূর্বে আমাদেরকে ইসরাইল ফিলিস্তিন দুটি দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং জানতে হবে এই যুদ্ধ অর্থাৎ ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ কোন কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে সে সম্পর্কে।

ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা বা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ ২০২৩

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ৭ তারিখ সকালে ইসরাইলের উদ্দেশ্যে পাঁচ হাজার শক্তিশালী রকেট নিক্ষেপ করে। যেগুলো ইসরাইলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রনডোম কে ফাঁকি দিয়ে বেশিরভাগই সরাসরি ইসরাইল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। 

এই হামলায় প্রায় ০৮ তারিখ পর্যন্ত ৬০০ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে এবং একজন ইসরাইলি জেনারেলসহ প্রায় ৫০ জন ইসরাইলীকে বন্দী করে নিয়ে গেছে ফিলিস্তিনিরা।সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি। আটক ঐ জেনারেলের নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিমরোদ আলুনি । তিনি গাঁজা অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত ইসরাইলি বাহিনীর একজন জেনারেল। পাশাপাশি ইসরাইলের বেশ কিছু সামরিক যান ধ্বংস হয়েছে এবং দুটি সামরিক ঘাঁটি দখলে নিয়েছে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা অর্থাৎ আল কাসাম ব্রিগেড এর সদস্যরা দক্ষিণ ইজরাইলে প্রবেশ করে এই হামলা চালিয়েছে। এই সময় ফিলিস্তিন  ইসরাইল সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়াগুলো বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এর পরবর্তীতে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন,” আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি”।
তার বক্ত্যেবের পরই পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে গাজায় ব্যাপক  বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বিমান বাহিনী। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২০০ অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি বাহিনী সামরিক-বেসামরিক প্রায় সকল স্থাপনাতে গণহারে বোমা বর্ষণ করছে। এক কথায় বলা যায় ইজরাইল ফিলিস্তিন বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে,  এই হামলা ইসরাইলের গোয়েন্দাদের দুর্বলতা গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এত বড় একটি হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা কিছুই আচঁ করতে পারেনি এটি সত্যি অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার। আরেকটি প্রশ্ন এখানে উঠে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম  এর কার্যকারিতা কি তাহলে শেষ হয়ে গেল?? এটিই ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা বা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ ২০২৩ এর সর্বশেষ খবর।

ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ

ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ খুঁজতে গেলে আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের ইতিহাস। যে ইতিহাস শত বছরের ফিলিস্তিনিদের কান্না নির্যাতন এবং রক্তের ইতিহাস। নিজেদের মাটিতে পরাধীনতার শিকল নিয়ে শত বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।

ফিলিস্তিন পূর্বে মুসলিমদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল কিন্তু ১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভের পর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোরের একটি ঘোষণার মাধ্যমেই পৃথিবীতে নতুন একটি রাসমমস্যার জন্ম নেয়। যার নাম ইসরাইল। লর্ড বেলফোরের  সে ঘোষণা ”বেলফার ঘোষণা” নামে পরিচিত। 
ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন থেকে আরব মুসলিমরা স্বাধীন এবং সার্বভৌমভাবে বসবাস করে আসছিল ওসমানিয়া সালতানাতের অধীনে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ওসমানীয় সালতানাতের সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যাচ্ছে ঠিক তখনই ব্রিটিশরা ইহুদিদের পুনর্বাসনের জন্য ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়। ইহুদিদের চাইতে আরবদের সংখ্যা ফিলিস্তিনে কয়েক গুণ বেশি ছিল কিন্তু ব্রিটেনের শক্ত সামরিক পদক্ষেপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হয় মধ্যপ্রাচ্যের ক্যান্সার অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল। 

ইসরাইল কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত অন্যান্য কোন দেশ স্বীকৃতি না দিলেও তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়ার শক্তি বা সাহস কারোই ছিল না। তৎকালীন আরব দেশগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব ইত্যাদিতে এতটাই ব্যতিব্যস্ত ছিল যে ফিলিস্তিন ব্যাপারে তারা কোন শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে একত্রিত হতে থাকে। 

এসময় ইহুদীরা তাদের নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে যার নামকরণ করা হয় ”হাগানাহ।” এ সময় থেকে মূলত সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলিদের আক্রমণ শুরু হয়। ১৯১৭ সালে ”বেলফোর ঘোষণার” মাধ্যমে যে স্বপ্ন ইহুদীরা দেখতে শুরু করে তার  চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ঘটে ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে। এই দিন ডেভিড বেন গুরিয়ন প্রথম ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ইজরাইলকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন। ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আরব দেশগুলো একজোট হয়ে ইজরাইলে হামলা চালায়। কিন্তু ইসরাইলের সেনাবাহিনী পশ্চিমাদের সহায়তায় আরব বাহিনীকে পরাজিত করে যেটি আরব ইসরাইল যুদ্ধ ১৯৪৮ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে৫ টি আরব দেশ একত্রিত হয়ে ইজরাইলে হামলা শুরু করে কিন্তু ইসরাইল সেনাবাহিনী মাত্র ০৬ দিনের যুদ্ধে সম্মিলিত আরব শক্তিকে পরাজিত করে যেটি যুদ্ধ ইসরাইল যুদ্ধ ১৯৬৭ বা ৬ দিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত ।

পরবর্তীতে ইসরাইলিরা অল্প অল্প করে ফিলিস্তিনিদের প্রায় সকল এলাকায় দখল করে নেয় পাশাপাশি সিরিয়া এবং মিশরের বিশাল একটি এলাকা দখল করে নিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। সবকিছু জেনে শুনেও পশ্চিমা বিশ্ব, জাতিসংঘ কিংবা মানবতার ফেরি ওয়ালিা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু দেখেও যেন না দেখার ভান করে বসে আছে। 
নিজ দেশে আজ পরাধীন সাধারন ফিলিস্তিনিরা। ইজরায়েলের যখন মনে চাচ্ছে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, হত্যা করছে, কারাগারে নিয়ে যে বন্দি রাখছে। যার ফলশ্রুতিতেই ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূখণ্ডকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেছে ইজরাইলের বিরুদ্ধে। যেটির নাম তারা দিয়েছে  “ অপারেশন আল আকসা ।“ এগুলোই মূলত ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা বা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ ২০২৩ এবং ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম আশা করব এই সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়েছেন। এরকম প্রয়োজনী আরো পোস্ট করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইসলামিক ইনফো বাংলা

আমাদের ফেসবুক পেইজ