বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি সম্পর্কে বিস্তারতি জেনে নিন
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি। দেশের তরুন ছাত্র-সমাজকে যুদ্ধকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে গড়ে তোলায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসির মূল উদ্দেশ্য।
জ্ঞান,শৃঙ্খলা নীতি বাক্য নিয়ে পথা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসির। এটি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর অধিনস্ত একটি আধাসামরিক, সংরক্ষিত এবং স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। একজন ক্যাডেট যাচাই বাছাই এর পর ০২/০৩ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান। বিএনসিসিকে বলা হয় বাংলাদেশের সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃভূমিকা
যুদ্ধকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার জন্যই প্রশিক্ষপ্রাপ্ত হয় একজন ক্যাডেট। সাধারণ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরাই এই বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও বিএনসিসিও অফিসার হিসেবে চাকুরিকালীন সময়ে এই বাহিনীতে নিয়োগ পান।
বর্তমানে এই বাহিনীর সক্রিয় ক্যাডেট সংখ্যা প্রায় ২৪০০০ এবং সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করা এক্স ক্যাডেট সংখ্যা ৩০০০০০। এই বাহিনীর সদরদপ্তর ঈশা খান এভিনিউ, উত্তরা, ঢাকায় অবস্থিত। এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাইপাইল,সাভার,গাজীপুর।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ মহাপরিচালক
বিএনসিসরি বর্তমান মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদি। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক তারকা বিশিষ্ট জেনারেল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তিনি ১৯৯০ সালে আর্টিলারী কোরে কমিশন লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসির ২৩ তম মহা পরিচালক।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ
১৯২০ সালে সর্বপ্রথমবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইংরেজ সরকার গড়ে তোলে ”ইউনিভার্সিটি ট্রেনিং কোর” বা ইউটিসি। পাকিস্থান আমলে ১৯৬৬ সালে এর নাম করন করা হয় “পাকিস্তান ক্যাডেট কোর বা পিসিসি” এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নিয়ে “জুনিয়র ক্যাডেট কোর বা জেসিসি” গঠন করা হয়।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পিসিসি ও জেসিসি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং এই বাহিনীর মোট ২২ জন ক্যাডেট শহীদ হন।স্বাধীনতার পরে পাকিস্তান ক্যাডেট কোর বা পিসিসি নাম পিরবর্তন করে “বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর বা বিসিসি” নামকরা হয়। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রীয় আদেশে বিসিসি এবং জেসিসিকে একত্রিত করে নাম রাখা হয় “বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি”।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ ভর্তি যোগ্যতা
বিএনসিসির একজন ক্যাডেট হতে হলে বাংলাদেশের যে সকল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসির প্লাটুন রয়েছে সে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে হবে। উচ্চতা ৫’৬’’ এর বেশি হতে হবে। তবে জুনিয়র ডিভিশনে নির্দিষ্ট কোন উচ্চতা নেই। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিএনসিসি ইউনিটে নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে হয়। পরবতীর্তে লিখিত, শারীরীক এবং মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলে একজন শিক্ষার্থী ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ গঠন কাঠামো
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে এক বা একাধিক প্লাটুন থাকে। প্রতিটি প্লাটুনে ৩৩-৩৯ জন ক্যাডেট থাকেন। প্লাটুনের দ্বায়িত্বে একজন ক্যাডেট সার্জেন্ট থাকেন। কয়েকটি প্লাটুন নিয়ে গঠিত হয় একটি কোম্পানি। কয়েকটি কোম্পানি নিয়ে গঠিত হয় একটি ব্যাটালিয়ন। ব্যাটালিয়নের দ্বায়িত্বে থাকেন ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও)। কয়েকটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে গঠিত হয় একটি রেজিমেন্ট। একেকটি রেজিমেন্টে সাধারণত ৪০০০-৫০০০ ক্যাডেট থাকেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ শাখা, রেজিমেন্ট, ফ্লোটিলা ও স্কোয়াড্রন সমূহ
বিএনসিসির মোট তিনটি শাখা এবং ০৫ টি রেজিমেন্ট,০৩ টি ফ্লোটিলা ও ০৩ টি স্কোয়াড্রন রয়েছে।
০৩টি শাখা হচ্ছে
- সেনা শাখা
- নৌ শাখা
- বিমান শাখা
০৫ টি রেজিমেন্ট (সেনা শাখা) হচ্ছে-
- রমনা রেজিমেন্ট
- কর্ণফুলী রেজিমেন্ট
- ময়নামতি রেজিমেন্ট
- মহাস্থান রেজিমেন্ট
- সুন্দরবন রেজিমেন্ট
০৩ টি ফ্লোটিলা(নৌ শাখা) হচ্ছে-
- ঢাকা ফ্লোটিলা
- খুলনা ফ্লোটিলা
- চট্টগ্রাম ফ্লোটিলা
০৩ টি স্কোয়াড্রন (বিমান শাখা) হচ্ছে-
- ৫৬ স্কোয়াড্রন
- ৫৭ স্কোয়াড্রন
- ৫৮ স্কোয়াড্রন
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ পদক্রম
বিএনসিসির তিন শাখারই ০৪ টি পদক্রম রয়েছে।
- ক্যাডেট
- ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল
- ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল
- ক্যাডেট সার্জেন্ট
- ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও)
শিক্ষকদের পদ সমূহঃ
- টিচার আন্ডার অফিসার (সকল শাখা)
- প্রফেসর আন্ডার অফিসার (সকল শাখা)
- সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট (সেনা শাখা) / এক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট (নৌ শাখা) / পাইলট অফিসার (বিমান শাখা)
- লেফটেন্যান্ট (সেনা শাখা) / সাব লেফটেন্যান্ট (নৌ শাখা) / ফ্লাইং অফিসার (বিমান শাখা)
- ক্যাপ্টেন (সেনা শাখা) /লেফটেন্যান্ট (নৌ শাখা) / ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (বিমান শাখা)
- মেজর (সেনা শাখা)
- লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (সেনা শাখা)
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ প্রশিক্ষণ সমূহ
- শীতকালীন প্রশিক্ষণঃ প্রতি বছর শীতের মৌসুমে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সাথে সরাসরি প্রশিক্ষন এবং যুদ্ধ মহড়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ক্যাডেটরা।
- অস্ত্র প্রশিক্ষণঃ একজন ক্যাডেটকে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রায় সকল ক্যাম্পেই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ক্যাডেটদের।
- সাধারণ প্রশিক্ষণঃ সাধারণ প্রশিক্ষণ একজন ক্যাডেটকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্লাটুন হতে প্রদানকরা হয়।
- ব্যাটালিয়ন ট্রেনিং এক্সারসাইজ (BTE): বছরের মোট দুইবার একেকটি ব্যাটালিয়ন তার ক্যাডেটদের নিয়ে এই ক্যাম্পের আয়োজন করে।
- রেজিমেন্টাল ট্রেনিং এক্সারসাইজ (RTE): বছরে একবার এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এই ক্যাম্পে ব্যাটালিয়নগুলোর জন্য ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও) নির্বাচন করা হয়।
- সেন্ট্রাল ট্রেনিং এক্সারসাইজ (CTE): বছরে ০১ বার এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। বিএনসিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাইপাইল,সাভার,গাজীপরে।
- ব্যান্ড প্রশিক্ষণঃ প্রতিটি ব্যাটালিয়ন বছরে একবার ব্যান্ড প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
- অগ্নি নির্বাপন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণঃ বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিবিল ডিফেন্স এর তত্তবাবধানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসির সকল ক্যাম্পেই অগ্নি নির্বাপন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ সুবিধা
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ক্যাডেটরা বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীতে ভর্তির জন্য ৫% কোটা প্রাপ্ত হন। অফিসার পদে আবেদনকারীরা লিখিত পরীক্ষা ব্যাতীত সরাসরি মৌখিক পরীক্ষার জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্যাডেটদের মূল রেজাল্ট এর সাথে অতিরিক্ত ১০ নম্বর যোগ করা হয়। প্রতি বছর নির্বাচিত ক্যাডেটরা ভারত.শ্রীলংকা,মালদ্বীপ ও নেপাল ভ্রমণের সুযোগ পান।
ক্যাডেটরা ব্যাটালিয়ন এবং রেজিমেন্ট এর বিভিন্ন ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রশিক্ষিত , সাহসী ,নেতৃত্বদানের গুনাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারে পাশাপাশি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সাথে সরাসরি প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে দেশপ্রেমীক সৎ এবং সামরিক জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে পারে যেন বিপদকালীন সময়ে নিজের দেশ,মাটি এবং জনগনকে রক্ষায় কার্যকারী ভুমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসিঃ লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আশা করব আমাদের এই তথ্য বহুল পোষ্টটি আপনার পছন্দ হবে এবং আপনার জ্ঞানের পরিসীমাকে আরো বৃদ্ধি করবে। এরকম তথ্যবহুল পোষ্ট নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিটের অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।।
আমি একজন পলিটেকনিক এর ছাত্র আমি এখন বিএনসিসি করতে চাই যা আমার পলিটেকনিকেলে নেই, এটা আছে কলেজে তাহলে কি আমি এখন বিনসিস করতে পারবো না
দুঃখিত আপনি পারবেন না। আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সেখানে বিএনসিসির ইউনিট থাকতে হবে।