মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং অপকারিতা
মধু ও কালোজিরা অতি প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মধু ও কালোজিরাকে খায়রুদ্দাওয়া বা মহাঔষধ বলেছেন। প্রাচীনকাল থেকেই শক্তিবর্ধক পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং উপাদেয় খাদ্য হিসেবে মধু ও কালোজিরার ব্যাপক পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ।
সর্দি -কাশি ,মাথাব্যথা ,জ্বর , পেটের বিভিন্ন সমস্যা, যৌন দুর্বলতা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ছোট থেকে বড় প্রায় সকল চিকিৎসা ক্ষেত্রেই মধু ও কালোজিরা র রয়েছে বিশেষ ভূমিকা আজকে আমরা মধু ও কালোজিরার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানব।
সূচিপত্রঃমধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং অপকারিতা
১.মধু-
২.কালোজিরা-
১.মধু
উপাদান
মধুতে প্রায় ৪০ টি খাদ্য উপাদান থাকে যেমন:
- ফ্রুক্টোজ,
- গ্লুকোজ,
- মন্টোজ,
- সুক্রোজ,
- লবণ
- অ্যামাইনো এসিড
- এনজাইম
- আয়োডিন
- কপার
- ভিটামিন বি ১, বি২, বি৩, বি৫, বি ৬
- মাইক্রোবিয়াল
- এন্টি ব্যাকটেরিয়াল
- ক্যালোরি
- জিংক
- এলমোনিয়াম
- ম্যালিক এসিড
- সাইট্রিক এসিড
- বোরন
- টারটারিক এসিড
- অ্যান্টিবায়োটিক
- অক্সালিক অ্যাসিড
- পানি
- এসিটাইল কোলিন
- সাইস্টোস্ট্যাটিক্স
- এসকরবিক অ্যাসিড বা ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
- ক্যারোটিন বা ভিটামিন -এ
- ভিটামিন -কে ইত্যাদি
খাওয়ার নিয়ম
মধু খাওয়ার ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই আপনি যেকোনো সময় মধু খেতে পারেন তবে
কিছু কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে মধু খাওয়ার ফলাফল একটু বেশিই পাওয়া যাবে
যেমন
- মধু খাওয়ার সবচাইতে ভালো সময় সকালে খালি পেটে
- প্রতিদিন নিয়মিত এক চামচ মধু হাতের তেলেতে নিয়ে চেটে খাওয়ার অভ্যাস করুন
- লেবুর রসের সঙ্গে কাঁচা মধু খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়
- তুলসী পাতার রসের সাথে মধু খেলে কাশি দূর হয়
- গুড়ের রসের সঙ্গে মধু খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়
- যৌন সমস্যা দূর করতে মধুর সাথে কাঁচা ছোলা সেবন করা যায়
- দারুচিনির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে যায়
গরম পানি গরম দুধ কিংবা চায়ের সাথে এবং রান্না করে কখনো মধু খাবেন না
মধু খাবেন না, মধু কখনো প্লাস্টিকের কোন পাত্রে রাখবেন না অবশ্যই কাঁচের
পাত্রে রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে মধু কখনোই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
উপকারিতা
নিয়মিত ও পরিমিত মধু সেবন করলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় তা হল-
- যৌন দুর্বলতা দূর হয়
- তারুণ্যতা বজায় থাকে
- চুল ও ত্বক ঠিক রাখে
- উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়
- ওজন কমাতে সহযোগিতা করে
- শরীরকে সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখে
- হাঁপানি রোধ করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- গ্যাসের সমস্যা দূর করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে
- যৌবন ধরে রাখতে সহযোগিতা করে
- দৃষ্টিশক্তি এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে
- রক্ত পরিশোধন করে
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
- শিশুদের দৈহিক গড়নএবং ওজন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে
- বাতের ব্যথা দূর করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- সর্দি কাশি জ্বর ঠান্ডা লাগার সমস্যা ইত্যাদি নিরাময় করে
- পোড়া ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- হাড় শক্তিশালী করে
আরো পড়ুনঃ জিম করার উপকারিতা এবং জিম করার বয়স
অপকারিতা
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের মধু খাওয়া উচিত নয় এতে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে
- যাদের অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে মধু সেবনে সতর্ক থাকা উচিত
- অতিরিক্ত মধু খেলে বদহজম পেট ব্যথা হতে পারে
- প্লাস্টিকের বোতলে মধু রাখলে মধুর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই প্লাস্টিকে রাখা মধু খেলে বিভিন্ন রকম অসুখ হতে পারে
- বর্তমানে বাজারে অধিকাংশ মধুই ভেজাল , যা আপনার শরীরের উপকারের বদলে ক্ষতি করবেতাই মধু কিনার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
আসল মধু চিনার উপায়
- এক গ্লাস পানি নিন পানিতে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলুন যদি সেটি ফোটা অবস্থাতে গ্লাসের নিচে চলে যায় তাহলে বুঝতে হবে আসল মধু আর যদি ফোটাটি ফেটে যায় তাহলে বুঝতে হবে নকল মধু
- মধুতে ম্যাচের কাঠি ডুবিয়ে আগুন জ্বালাতে হবে। যদি আগুন জলে তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল মধু
- মধু নিয়ে ফ্রিজে রাখুন যদি জমাট বাঁধে তাহলে বুঝবেন এটি আসল নয় আর জমাট না বাঁধলে এটি আসল মধু
- ব্লটিং পেপার এর সাহায্যেও মধু পরীক্ষা করা যায় ব্লটিং পেপারে আসল মধু শোষিত হয় না অর্থাৎ ভেজাল মধু ব্লটিং পেপার কে আর্দ্র করে ফেলে
২.কালোজিরা
উপাদান
বহু গুণে গুণান্বিত এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার হচ্ছে কালোজিরা আসুন
জেনে কালোজিরাতে কি কি উপাদান থাকেঃ
- অ্যান্টিবডি
- আমিষ
- শর্করা
- পাচক এনজাইম
- প্রোটিন
- ক্যারোটিন
- হরমোন স্নেহ
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ফসফরাস
- নাইজেলন
- কপার
- জিঙ্ক
- থাইমোকিনোন
- নিয়োসিন
- ভেষজ তেল
- লিনিক অ্যাসিড
- অম্লনাশক উপাদান
- অলিক এসিড
- ফসফেট
- পটাশিয়াম
- চর্বি
- ম্যাগনেসিয়াম
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন সি
- ফোলাসিন
- সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
উপকারিতা
- যৌন দুর্বলতা দূর করে।
- পুরুষদের লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার সমাধান করে।
- চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
- দাঁতের ব্যথা দূর করে
- চুল পড়া কমায়
- হাঁপানি উপশম করে
- ক্ষতিকর জীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষা করে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
- ফোড়া,ঘা ইত্যাদি অল্প সময়ে সেরে যায়
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে
- ব্যথাযুক্ত স্থানে কালোজিরা তেল মালিশ করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়
- জ্বর কফ ঠান্ডা কাশি ইত্যাদিতে কালোজিরা প্রতিষেধকের কাজ করে
- পাইলস নিরাময়ের কাজ করে
- অনিয়মিত মাসিক রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে
- জন্ডিস ও লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করেন কাজ করে
- হজমের সমস্যা দূর করে
- শিশুদের মেধা বিকাশের সহায়তা করে
- শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ধ্বংস করে
- ঘুম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
আরো পড়ুন ঃ জিম করার উপকারিতা এবং জিম করার বয়স
অপকারিতা
মাত্রা অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়, ঠিক সেরকম কালোজিরা সেবনের
ক্ষেত্রেও কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে বিশেষ করে-
- গর্ভবতী মহিলাদের কালোজিরা তেল ব্যবহার করা উচিত নয়
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে অকালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- দীর্ঘদিন একটানা সেবনের ফলে-
গ্যাসের সমস্যা,পাকস্থলী সংকোচন,বুক জ্বালা হতে, বমি বমি ভাব
পারে।
লেখক এর মতামত
মধু ও কালোজিরা অত্যন্ত উপকারী দুইটি উপাদান। এ দুটি আপনাকে অনেক
অসুখ-বিসুখ রোগ বালাই থেকে দূরে রাখবে। আশা করব আমাদের আজকের এই পোস্টটি
পড়ে আপনি মধু ও কালোজিরা খাবার নিয়ম, উপকারিতা, অপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এরকম আরো তথ্যবহুল পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আপনার যেকোন
মতামত কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন।