নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলা এবং পানির বর্ণনা
পানির বর্ণনা এবং নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলাগুলো আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন।
কেননা পবিত্রতা অর্জনের এক মাত্র মাধ্যম পানি। আজকে আমরা পানির বর্ণনা
এবং নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলা গুলো জেনে নিব।
পাক-পবিত্রতা আল্লাহ তা'আলার নিকট খুবই পছন্দীয় স্বভাব এবং পাক-পবিত্র ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা খুবই ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেছেন—আল্লাহ্ তা'আলা পাক-পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসেন ।
ভূমিকা
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)
ইরশাদ করেছেনঃ” আত্বত্বহূরু শাতরুল ঈমান ” অর্থ:পবিত্রতা ঈমানের অংশ বিশেষ । পবিত্রতা অর্জনের জন্য আমাদের পানির বর্ণনা এবং নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলা জানা খুবই প্রয়োজন।
নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলাঃ নাজাসাতে গলীযা বা মারাত্মক ধরনের নাপাকি
যে সকল বস্তুর নাপাকি মারাত্মক রকমের তা নাজাসাতে গলীযার পর্যায়ভুক্ত। যেমন-
প্রবহমান রক্ত, মেয়েলোকের হায়েয ও নেফাসের রক্ত, মানুষের মল-মূত্র ও বীর্য,
কুকুর ও বিড়ালের পায়খানা-প্রস্রাব, কুকুরের শরীরের যাবতীয় অংশ, মহিষ,
খচ্চর ও ভেড়ার মল, যে সকল পশুর গোশ্ত খাওয়া হারাম- তাদের মল-মূত্র,
হাঁস-মুরগির পায়খানা ইত্যাদি।
এ ধরনের নাজাসাত শরীরে অথবা কাপড়-চোপড়ে লাগলে দেখতে হবে সে নাপাক বস্তুটি
তরল না ঘন। যদি তা তরল হয় অতঃপর হাতের তালুতে কোনো তরল জিনিস যে পরিমাণ টিকে
থাকে যদি ঐ পরিমাণ বা তার চেয়ে কম হয়, তবে তা নিয়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ
হবে। আর যদি এর বেশি হয়, সে অবস্থায় শরীর বা কাপড় চোপড় না ধুয়ে তা নিয়ে
নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না ।
আর যদি নাপাক বস্তুটি গাঢ় হয়, তবে ওজনে একসিকি পরিমাণ পর্যন্ত মাফ অর্থাৎ ঐ
পরিমাণ নাপাকযুক্ত শরীর বা কাপড় দ্বারা নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে, তার বেশি
হলে জায়েজ হবে না। এ অবস্থায় শরীর বা কাপড় ধুয়ে পাক করে নিতে হবে। উপরোক্ত
পরিমাণ নাজাসাতে গলীযাসহ নামাজ পড়া জায়েজ হলেও বিনা ওজরে না ধুয়ে তা সহ
নামাজ আদায় করা মকরুহ।
উপরোক্ত পরিমাণের বেশি লাগলে, যদি ভুলবশত তা নিয়ে নামাজ আদায় করে থাকে,
তাহলে ঐ নামাজ পুনঃ আদায় করতে হবে। কোনো খাদ্যের ভিতরে এ ধরনের নাজাসাত
পড়লে, তা পরিমাণে অল্প হলেও ঐ খাদ্য খাওয়া জায়েজ হবে না। যেমন- এক পাতিল
দুগ্ধের ভিতরে একটু গরুর প্রস্রাব পড়লে তা খাওয়া জায়েজ হবে না ।
নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলাঃ নাজাসাতে খফীফা বা কম মারাত্মক নাপাকি
নাজাসাতে গলীয়া ব্যতীত আর যত রকম নাপাক বস্তু আছে সে সবগুলোই নাজাসাতে
খফীফা। গরু, বকরি, ভেড়া-মহিষ ইত্যাদি যে সকল পশুর গোশত খাওয়া হালাল সেগুলোর
মূত্র, ঘোড়ার মূত্র এবং যে সকল পাখির মাংস খাওয়া হারাম সেগুলোর পায়খানা
নাজাসাতে খফীফা । এ ধরনের নাজাসাত শরীরে অথবা জামা-কাপড়ে লাগলে যে অংশে
লেগেছে সে অংশের চার ভাগের এককভাগ হতে কম হলে মাফ।
যে সকল কাপড়ের অংশ নেই, যেমন- চাদর, পাগড়ি, পেটিকোট ইত্যাদি সেগুলোর পুরা
কাপড়ের চারভাগের এক ভাগ ধরতে হবে। আর যদি শরীর বা জামা-কাপড়ের চার ভাগের
একভাগ অথবা তার চেয়ে অধিক স্থানে এ ধরনের নাজাসাত লাগে, তাহলে তা নিয়ে
নামাজ আদায় জায়েজ হবে না ।
নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলা
১. মাসআলা : শরীর ও জামা-কাপড়ের নাপাকি দূর করতে হলে এমনভাবে ধুইবে, যাতে
নাজাসাতের দাগ মিটে যায়। যদি প্রথম ধোয়ায় নাজাসাতের দাগ মিটে যায়, তবে
পরে আরো দু'বার এবং দ্বিতীয় ধোয়ায় নাজাসাতের দাগ মিটে গেলে পরে আর মাত্র
একবার ধৌত করা অতি উত্তম।
২. মাসআলা : কোনো তরল নাজাসাত কাপড়-চোপড়ে লাগলে তা পাক করার জন্য তিনবার
ধৌত করতে হবে এবং প্রত্যেকবারই কাপড়কে উত্তমরূপে নিংড়াতে হবে যাতে কাপড়ে
পানি না থাকে; পানি থাকা পর্যন্ত কাপড় পাক হবে না ।
৩. মাসআলা : চৌকি, চাটাই, থালা-বাসন, জুতা ইত্যাদি যা কাপড়ের মতো নিংড়ানো
যায় না, এতে নাপাকি লাগলে তা পাক করতে হলে একবার ধৌত করে কিছু সময় এরূপে
রেখে দেবে, যাতে পানি একেবারে ঝরে যায় । পানি পড়া বন্ধ হলে পুনরায় ধৌত করে
ঐ রূপ রেখে দেবে। এরপর আবার ধৌত করে অনুরূপভাবে রেখে দেবে। তিনবার ধৌত করার
পর পানি ঝরা বন্ধ হলেই তা পাক হয়ে যাবে।
৪. মাসআলা : মশা-মাছি ও ছারপোকার রক্ত নাপাক নয় । এগুলোর রক্ত শরীরে বা
কাপড়-চোপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে না ।
৫. মাসআলা : কোনো তৈলে নাজাসাত পড়ে নাপাক হয়ে গেছে, সে তৈল হাতের তালুর
বিস্তার অপেক্ষা কম পরিমাণ কোনো কাপড়ে লাগলে তা নিয়ে নামাজ পড়া জায়েজ
হবে। কিন্তু তৈল তার চেয়ে বেশি পরিমাণ স্থানে লাগলে বা ছড়িয়ে পড়লে তা
নিয়ে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না; বরং ঐ কাপড় ধৌত করা ওয়াজিব হবে।
৬. মাসআলা : চাকু-ছুরি, দা-বটি, আয়না, সোনা-রূপার অলঙ্কার অথবা তামা-পিতল ও
লোহার কারুকার্যবিহীন আসবাবপত্রে নাপাকি লাগলে তা উত্তমরূপে মুছে ফেললে কিংবা
মাটি দ্বারা মেজে নিলে পাক হবে। কারুকার্য খচিত আসবাবপত্রে নাপাকি লাগলে তা
ধৌত না করলে পাক হবে না ।
৭. মাসআলা : নাপাক বিছানায় শয়ন করলে যদি নিজের শরীরের ঘামে কাপড় ভিজে
যায়, তবে শরীর কিংবা কাপড় কোনোটাই নাপাক হবে না। কিন্তু শরীরের ঘামে নাপাক
বিছানা ভিজে তার নাপাকি কাপড়ে কিংবা শরীরে লাগলে তা নাপাক হয়ে যাবে।
উপরে নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলা গুলো আলোচনা করা হল।
পানির বর্ণনা
যাবতীয় নাপাকি হতে শরীর, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি পাক করার জন্য পানিই একমাত্র
সম্বল এবং ঐ পানি অবশ্যই পাক হতে হবে। নাপাক পানি দ্বারা কোনো জিনিস ধৌত করলে
তা পাক তো হবেই না; বরং নাপাক পানি মিশ্রিত হয়ে নাপাকির মাত্রা আরো বেড়ে
যাবে। কাজেই কোন পানি পাক আর কোন পানি নাপাক তা ভালোভাবে জানা দরকার ।
নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-দীঘি ও ঝর্ণার পানি পাক । বৃষ্টির পানিও পাক ; কিন্তু
নাপাক স্থানে জমা বৃষ্টির পানি পাক না ।
ছোট পুকুর ও কুয়ার পানিতে কোনো প্রকার নাপাক জিনিস পড়ে পানির রং, স্বাদ
ও গন্ধ নষ্ট করে ফেললে ঐ পানি নাপাক হয়ে যাবে । গর্ত বা হাউজের পানি পাক ।
কিন্তু হাউজটির ক্ষেত্রফল একশত বর্গহাত হতে হবে অর্থাৎ দশ হাত দৈর্ঘ্য ও দশ হাত
প্রস্থ হতে হবে, আর তার গভীরতা কমপক্ষে এই পরিমাণ হতে হবে যাতে দু' হাত ভরে
পানি ওঠালে নিচের কাদা ওঠে পানি ঘোলা না হয়ে যায় । স্রোতের পানি পাক । কিন্তু
শহরের নর্দমার স্রোতের পানি পাক না, যেহেতু তাতে ময়লা-আবর্জনা থাকে ।
খাল-বিল, পুকুর ইত্যাদির পানিতে যদি কোনো তরল নাজাসাত পড়ে মিশে যায়, তবে ঐ
পানি ব্যবহার করা জায়েজ হবে। মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি যে সকল জীব পানিতে বাস করে,
তা পানিতে মরে থাকলে পানি নাপাক হয় না । কিন্তু ঐ পানি পান করা মকরুহ।
যে পানি দ্বারা একবার কোনো জিনিস পাক করা হয়েছে ঐ পানি দ্বারা অজু-গোসল করা
জায়েজ হবে না। ঐ পানি পান করা বা সালুনে ব্যবহার করা মকরুহ। সাবান, জাফরান
বা অন্য কোনো বস্তু পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে পানির স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন
করল, কিন্তু তরলতা নষ্ট করল না, এ পানি ব্যবহার করা জায়েজ হবে।
লেখকের মতামত
আজকে আমরা পানির বর্ণনা এবং নাপাকি সম্পর্কিত জরুরী মাসআলা গুলো জানলাম।
আশা করি এগুলো আপনাদের কাজে আসবে। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় মাসআলা
জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।ধন্যবাদ।।